মৌলভীবাজারের রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরপারের গ্রাম রক্তার একটি বাড়িতে আছে দেড় শ বছরের পুরোনো জারুলগাছ
মৌলভীবাজারের রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরপারের গ্রাম রক্তার একটি বাড়িতে আছে দেড় শ বছরের পুরোনো জারুলগাছ

হাওরপারে দেড় শ বছরের ‘বুড়ো’ গাছে জারুলের তারুণ্য

বয়স যা–ই হোক, গাছভর্তি ফুলের দিকে তাকালে মনে হতে পারে আকাশে নীলের দেশে বেগুনি রঙের টুকরা মেঘ ভাসছে। গাছটি কত বছরের, এ প্রশ্ন হয়তো কারও মনেই আসে না। ‘আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে’—এ রকম ফুলের দিকে তাকিয়ে কারও কারও অনেকটা সময় কেটে যায়, বেলা বয়ে যায়।

অনেক গাছের ভিড়ে আলাদা মর্যাদা নিয়ে একটি জারুলগাছ দাঁড়িয়ে আছে মানুষের ভালোবাসায়। এ রকমই একটি জারুলগাছ আছে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপারের গ্রাম রক্তায়। যার বয়স অনেক বছর, দেড় শ পেরিয়ে গেছে। গ্রীষ্ম এলেই পাতাঝরা শাখাগুলো পূর্ণ হয়ে বেগুনি রঙের বন্যা আসে। অনেক দূরের মানুষকেও ‘দাঁড়াও পথিকবর’ বলে কাছে টানে।

গ্রীষ্ম এলেই জারুলগাছে বেগুনি রঙের বন্যা আসে

রাজনগর উপজেলা সদর থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে রাজনগর-বালাগঞ্জ খেয়াঘাট সড়ক। এই সড়কের পাঁচগাঁও পেরিয়ে একটি স্থান থেকে ছোট একটি গ্রামীণ পাকা সড়ক পশ্চিমের দিকে চলে গেছে। সড়কটির শেষেই আছে রক্তা গ্রাম। একদম হাওরের কাছে। ওই রক্তা গ্রামেই এখন একটি জারুলগাছ ফুলের প্রাচুর্যে সবার কাছে আদরের, ঐতিহ্যের। একটি দেয়ালঘেরা বাড়ির প্রবেশপথের পাশে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। বাড়ির অনেকটা জায়গাজুড়ে ছায়া দিয়ে আছে। গাছটির ‘ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো’ মাথায় ফুল ছাড়া আর কিছু নেই। কিছু ফুল ঝরে গেছে, থোকায় থোকায় গোল-সবুজ ফল ধরতে শুরু করেছে। তারপরও ফুলের প্রাচুর্য কমেনি।

গাছটির শরীর, ডালপালার দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়, তার অনেক বয়স হয়েছে। তবে বয়স নিয়ে গাছটির কিছু ভাবার অবসর নেই, সে মৌসুমের অপেক্ষা করে। একসময় বেগুনি ফুল ফুটতে শুরু করে। তারপর আর কোনো বাধা নেই, অবাধ আনন্দে শাখে শাখে দুলে দুলে ফুল ফুটতে থাকে। ফুলের বন্যা আসে গাছটিতে। দেড় শতাধিক বছর ধরে রক্তা গ্রামের ওই বুড়ো গাছটি ফিরে পায় তার ঘুমিয়ে থাকা তারুণ্যকে।

হাওয়া আসছে, হাওয়া গাছের ওপর ঢলে পড়ছে। গাছটির নিচে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। গাছটির একপশলা ছায়ার নিচে তখন শিক্ষক আবদুল আজিজসহ আরও অনেকেই। বাড়ির লোকজন যেন পিতৃপুরুষের শীতল ছায়া মাখছেন শরীরে। জারুলগাছটির উত্তর পাশে আছে একটি কৃষ্ণচূড়া, সেটিতেও যেন দুপুরবেলার আগুন লেগেছে। লাল-বেগুনিতে পাড়াটাই বদলে গেছে।

বাড়ির মালিক আবদুল হাকিমের দাবি, গাছটি তাঁর দাদার আমলের। সেই হিসাবে গাছটির বয়স এখন দেড় শ বছরের বেশি।

বাড়ির মালিক আবদুল হাকিম (৭৬) জানান, তাঁর দাদা আবুল কাশেম মাস্টারের সময়ের গাছটি। সেই হিসাবে গাছটির বয়স এখন দেড় শ বছরের বেশি। শীতকালে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। এই সময়ে এত ফুল আসে যে গাছটি দেখার মতো হয়। তবে গাছটি আর কত দিন টিকে থাকবে, এ নিয়ে এরই মধ্যে অনেকের সংশয় তৈরি হয়েছে। গাছের ডালপালা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। ঝড়ঝাপটা সইবার সামর্থ্য কত দিন থাকবে, তা শুধু কালের যাত্রায় টিকে থাকা এ গাছটিই জানে।