ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল ইসলামসহ (ডান থেকে দ্বিতীয়) পাঁচজনকে আটক করেন সেনাসদস্যরা
ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল ইসলামসহ (ডান থেকে দ্বিতীয়) পাঁচজনকে আটক করেন সেনাসদস্যরা

ঢাকায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী নেতা, অবাক এলাকাবাসী

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ওরফে রাব্বি (২৮)। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে মোহাম্মদপুরের নেতা বনে যান। এ ঘটনায় হতভম্ব তাঁর প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসী।

সাইফুল ইসলাম পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামের সোহরাব হোসেনের (৬০) ছেলে। বাবা পেশায় একজন শ্রমিক। পাশাপাশি অন্যের গবাদিপশু দেখাশোনা করেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সাইফুলের বাবা সহজ-সরল মানুষ। তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। থাকেন অন্যের জমিতে একটি জরাজীর্ণ টিনের ঘরে। সাইফুল বেশি একটা এলাকায় না থাকলেও খারাপ হিসেবে জানতেন না। ঢাকায় যাওয়ার পর ‘সঙ্গদোষে খারাপ হয়েছে’ বলে তাঁরা মনে করেন।

ধানমন্ডিতে গত মে মাসে একজন প্রকাশকের বাসা ঘিরে মব সৃষ্টির ঘটনায় আটক হয়েছিলেন সাইফুল ইসলামসহ তিনজন। তখন থানায় গিয়ে নিজের জিম্মায় তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের ‘সেফ হাসপাতালে’ একটি মৃত শিশু জন্মগ্রহণকে কেন্দ্র করে সমন্বয়ক পরিচয়ে সাইফুলসহ কয়েকজন এসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় হাসপাতালের মালিকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সেনাবাহিনীকে ফোন করে জানায়। পরে সেনাসদস্যরা গিয়ে চারজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

সাইফুলের স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসারের অভাব–অনটনের কারণে সাইফুল ছোটবেলা নানার বাড়ি দশমিনা উপজেলার আলীপুরা গ্রামে কাটে। সেখানকার একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সংসারের হাল ধরতে প্রায় এক যুগ আগে ঢাকায় গিয়ে পোশাকশ্রমিকের কাজ শুরু করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মোহাম্মাদপুর এলাকায় অংশ নেন। পরে তিনি মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পান।

সাইফুলের বাবা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমি শ্রমিকের কাজ করি। পাশাপাশি মানুষের ছাগল পালন করি। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আমার স্ত্রীও অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য বসতভিটা বিক্রি করে চিকিৎসা খরচ চালিয়েছি। এখন থাকি অন্যের জমিতে টিনের একটা ছোট ঘর তুলে। ছেলে গার্মেন্টসে কাজ করে কোনো মাসে দুই হাজার, কোনো মাসে এক হাজার টাকা করে পাঠাত। ঋণ করে আমার চিকিৎসা চলে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হারুন (৪৫) বলেন, সাইফুল ঢাকায় পোশাকশ্রমিকের কাজ করতেন বলে জানতেন। পরে শুনেছেন, কোটা আন্দোলনের সময় আন্দোলন করে মোহাম্মদপুরের সমন্বয়ক হয়েছে। এখন শুনছেন চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রামের ‘সহজ-সরল’ ছেলে ঢাকায় গিয়ে এমন কাজে জড়িয়ে যাবে, তা তাঁদের কাছে অবিশ্বাস্য। এ ঘটনায় তাঁরা অবাক হয়েছেন।

চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ওরফে রাব্বির গ্রামের বাড়ি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামে

সাইফুলদের প্রতিবেশী মেহেদী হাসান বলেন, ‘সাইফুল এলাকায় খুব একটা আসত না। এলেও কারও সঙ্গে তেমন মিশত না। যতটুকু দেখেছি, তাতে খারাপ ছেলে ছিল না। ঢাকায় গিয়ে যাদের সঙ্গে মিশত, তাঁরা হয়তো ভালো ছিল না। এ কারণেই সে চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাসুম বলেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে কেউ কীভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা হয়? যাঁরা সাইফুলকে নেতা বানিয়েছে, তাঁরা চাঁদাবাজির দায় এড়াতে পারেন না। তিনি সাইফুল ও তাঁকে যাঁরা চাঁদাবাজ বানিয়েছেন, তাঁদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।