Thank you for trying Sticky AMP!!

বেঙ্গল টাইগার

সুন্দরবনের বাঘের রোগনির্ণয়ে প্রথমবারের মতো গবেষণা শুরু হচ্ছে

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণে নিয়মিত বিরতিতে গবেষণা হয়। তবে এবার প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে বাঘ ও বাঘের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত প্রাণীর রোগনির্ণয়ের গবেষণা। দু–এক দিনের মধ্যেই সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জের আওতাধীন ৬৫টি গবেষণা প্লট থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন গবেষকেরা।

গবেষণাটি করা হচ্ছে ‘সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ আওতায়। সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বনে থাকা কোনো প্রাণীর রোগনির্ণয়ের গবেষণা এটাই প্রথম। ফলে বাঘ, হরিণ, বানর, শূকরের মতো প্রাণীরা কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত আছে কি না, সে ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যাবে। আর যদি আক্রান্ত থাকে, তাহলে কী করলে এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারবে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

Also Read: সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় বানানো হচ্ছে টিলা

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন। গবেষণা দলের প্রধান হিসেবে আছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ। তিনি বলেন, আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নেওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। ১৫ দিন ধরে সুন্দরবনের ৬৫টি গবেষণা প্লট থেকে ২৫০টির মতো নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর সেই নমুনা একেক গবেষক একেকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন। আগামী এক বছর পর সেই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।

সুন্দরবনে বাঘের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত প্রাণীর রোগনির্ণয়েও গবেষণা হবে

গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গবেষণার জন্য নমুনা হিসেবে বাঘের মল, লোম, হাড় এবং হরিণ, বানর ও শূকরের দেহের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া বনের কাছাকাছি লোকালয়ের কুকুর ও বিড়ালের রক্ত নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। বাঘ, হরিণ, বানর ও শূকরের যে ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে, লোকালয়ের প্রাণীরও সে ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে কি না, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন গবেষকেরা। পাশাপাশি বাঘের জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়েও গবেষণা করবেন তাঁরা।

Also Read: সুন্দরবনের রায়মঙ্গল চর থেকে বাঘের মরদেহ উদ্ধার

এর আগে সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে বনে বাঘ গণনা কার্যক্রম শুরু হয়। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের (ফাঁদ) মাধ্যমে ওই কাজ চলছে। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শেষ হয়। গণনার কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, ওই দুই রেঞ্জে বাঘের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে খুলনা রেঞ্জে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে করা জরিপে বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বললেই চলে। সেই তুলনায় এবার খুলনা রেঞ্জে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিছু স্থানে বড় বাঘের সঙ্গে বাচ্চার ছবিও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। চারটি রেঞ্জ থেকে পাওয়া বাঘের তথ্য বিশ্লেষণ করে চলতি বছর বাঘ জরিপের তথ্য প্রকাশ করবে বন বিভাগ।

‘সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে বাঘ ও এর খাদ্য, রোগনির্ণয়। সেই গবেষণা কাজই শুরু করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম। গবেষণা কর্মটি বাঘের ভবিষ্যৎ বংশবৃদ্ধিতে এবং টিকে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বনের মধ্যে যে বাঘ মারা যাচ্ছে, তা কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে নাকি অন্য কোনো কারণে মারা যাচ্ছে, তা এ গবেষণা থেকে জানা যাবে।

Also Read: হুমকির মুখে বেঙ্গল টাইগার

শঙ্খচিলের ডানায় সুন্দরবন

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই বনভূমির স্থলে ২৮৯ প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। এ ছাড়া ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী বাস করে। ২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের শুমারিতে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪।

Also Read: ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত