সকালের হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যেই গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরসংলগ্ন করতোয়া সেতুতে
সকালের হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যেই গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরসংলগ্ন করতোয়া সেতুতে

পৌষের শেষ দিনে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

পৌষের শেষ দিনে এসে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আবারও বইতে শুরু করেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। জেঁকে বসেছে শীত। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছেন এই জনপদের মানুষ। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের দেখা মেলায় দিনের বেলা কিছুটা স্বস্তি আছে জনজীবনে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার। তবে সকাল সকাল সূর্যের দেখা মেলায় উঠেছে ঝলমলে রোদ।

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, দেশের কোনো এলাকায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এ ছাড়া ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।

এর আগে গত শুক্রবার পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ওই দিন তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে এর পরদিন গত শনিবার তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করে। গত রোববার সকাল থেকে কেটে যায় শৈত্যপ্রবাহ। আকাশে জমা হয় হালকা মেঘ। রোববার ও গতকাল সোমবার তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ থেকে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে।

সকালের হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যে পূর্বাকাশে উঁকি দিয়েছে সূর্য। মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে কাজে ছুটছেন মানুষ। আজ সকাল সোয়া আটটার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার মিলগেট এলাকায়

গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে তেঁতুলিয়ার আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে যায়। কুয়াশার পরিমাণ কমে বাড়তে থাকে উত্তরের হিমেল বাতাসের দাপট। রাতভর ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাসে অনুভূত হয় কনকনে শীত। এতে আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সকাল আটটা পর্যন্ত অনুভূত হয় হাড়কাঁপানো শীত।

আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশার সঙ্গে বইছে উত্তরের হিমেল বাতাস। কনকনে শীতের সকালে শহর ও সড়কে লোকজন খুবই কম। সকালে হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছিলেন কাজের সন্ধানে। এর মধ্যে সকাল আটটার দিকে পূর্বাকাশে উঁকি দিতে থাকে সূর্য। ধীরে ধীরে উঠতে থাকে ঝলমলে রোদ। বাড়তে থাকে মানুষের কর্মব্যস্ততা। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে থাকায় দিনের বেলায়ও শীত অনুভূত হচ্ছে।

সকাল আটটার দিকে জেলা শহরে ইজিবাইক নিয়ে আসা আবদুস সাত্তার (৪৩) বলেন, ‘সারা রাতি খুপে ঠান্ডা (শীত) ছিল। আইজ সকালে কুয়াশা কম কিন্তু বাতাসখান মনডা কহচে বরফের মতো ঠান্ডা। অটো চালাইলে কান আর হাতোত (হাতে) খুপে ঠান্ডা লাগেছে। এ্যালা বেলা উঠিচে, তাতে কনেক (একটু) আরাম লাগেছে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন বিরতির পর আজ তেঁতুলিয়ায় আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বর্তমানে তেঁতুলিয়ার আকাশ মেঘমুক্ত। হিমালয়ের হিম বায়ু সরাসরি তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করায় এখানে রাতভর কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও সকাল সকাল রোদের দেখা মিলেছে। এতে দিনের বেলা রোদ থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি থাকবে। ২০ জানুয়ারির পর এই এলাকায় আরও কয়েক দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।