Thank you for trying Sticky AMP!!

পিটিয়ে হত্যা

নরসিংদীতে চুরির অভিযোগ তুলে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার এস এম আইডিয়াল হাইস্কুলে চুরির অভিযোগ তুলে আল আমিন (৩৫) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহত যুবকের ছোট ভাই জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।

মামলায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব মিয়াকে (৩৪) প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন মো. নূরে আলম (৩০), ফরিদ মিয়া (৩৮), ফিরোজ মিয়া (৩৬), মোহাম্মদ আলী (৩৫), মো. আল আমিন (৩২), ইয়াসিন মিয়া (৩৩) ও শাকিল মাস্টার (২৬)। তাঁদের মধ্যে বিপ্লব ও শাকিল ছাড়া সবাই স্থানীয় লোচনপুর গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় অজ্ঞাতনামা ছয় থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়।

এর আগে গতকাল বুধবার ভোর থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নে লোচনপুর গ্রামে ওই বিদ্যালয়ে আটকে রেখে আল আমিনকে দফায় দফায় মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেওয়ার পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যান তিনি। নিহত আল আমিন একই ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার উল্লেখ করা হয়, নিহত আল আমিন পেশায় কৃষক ছিলেন। ঘটনার সময় ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে যান। ভোর চারটার দিকে প্রধান শিক্ষক বিপ্লব মিয়ার নেতৃত্বে ১৪ থেকে ১৫ জন তাঁকে ধরে বিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে দফায় দফায় পিটুনি দেন তাঁরা। দুপুর পর্যন্ত পিটুনির একপর্যায়ে আল আমিন অচেতন হয়ে গেলে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। দুই থেকে তিনটি ফ্যানের দাম জরিমানা হিসেবে দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু জরিমানা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেননি তাঁরা। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে স্বজনদের হাতে তুলে দেন প্রধান শিক্ষক বিপ্লব মিয়া। ওই অবস্থায় রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। ঢাকায় না নিয়ে বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান তিনি।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত যুবকের ছোট ভাই জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ছয় থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল ভোর চারটার দিকে লোচনপুর গ্রামের ওই বিদ্যালয়ে ঢোকেন আল আমিন। তিনি একটি কক্ষের তালা ভেঙে বৈদ্যুতিক ফ্যান খোলার চেষ্টা করেন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব মিয়া সাহ্‌রি খাওয়ার সময় মুঠোফোনে বিদ্যালয়ের ফটকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে চোখ বুলাচ্ছিলেন। ভেতরে যুবকের প্রবেশ ও তালা ভেঙে ফ্যান চুরির বিষয়টি দেখে তিনি স্থানীয় লোকজন ডেকে জড়ো করেন। সবাই মিলে বিদ্যালয়ে গিয়ে আল আমিনকে হাতেনাতে ধরেন। পরে তাঁকে একটি কক্ষে হাত-পা বেঁধে আটকে রেখে পিটুনি দেন তাঁরা।

Also Read: নরসিংদীতে চুরির অভিযোগে আটকে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন, যুবকের মৃত্যু

স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল হওয়ার পর দফায় দফায় ওই যুবককে মারধর করা হয়। কখনো কিল-ঘুষি, কখনো লাঠি দিয়ে নির্যাতন চলে। বেলা দুইটা পর্যন্ত উপর্যুপরি মারধরের পর তিনি অচেতন হয়ে যান। তখন স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। বেলা তিনটায় স্বজনেরা অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে বাড়িতে ফেরার পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান।

খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে থানার ওসি সাফায়েত হোসেনসহ থানা-পুলিশ নিহত যুবকের বাড়ি ও ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর রাত ১০টার দিকে আল আমিনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।