ময়মনসিংহে-১০ (গফরগাঁও) সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা করেও আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানকে আসনটিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে দল। এ আসন থেকে আরও পাঁচ নেতা বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে প্রচারে ছিলেন। তাঁরা হলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, এ বি সিদ্দিকুর রহমান, সদস্য মুশফিকুর রহমান, আল ফাত্তাহ ও মোফাখখারুল ইসলাম। শনিবার মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী এ বি সিদ্দিকুর রহমান ও মুশফিকুর রহমানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিভিন্ন স্থানে সড়কে আগুন দিয়ে দলীয় প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেল চারটার দিকে গফরগাঁও উপজেলার শিবগঞ্জ রোড রেলক্রসিং এলাকায় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী আগুন দেন। এ ছাড়া উপজেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টেও আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে গফরগাঁও পৌর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেওয়ার কারণে রেললাইনের দুই পাশের বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকে পড়ে।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, রোববার সকাল ৯টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো গফরগাঁও পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা। গফরগাঁও পৌর শহরের ৩০-৪০টি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে, টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় পৌর শহরের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধরা স্টেশন ইয়ার্ড এলাকায় পিডব্লিউর বাংলোর সামনে, শিবগঞ্জ রেলক্রসিং, কাচারী রেলক্রসিং এলাকায় স্লিপারে অগ্নিসংযোগ করে ও রেললাইনে শুয়ে পড়ে রেল অবরোধ করেন। এতে বিকেল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনা প্রহরায় গফরগাঁও রেলস্টেশনে আটকে থাকা ময়মনসিংহমুখী বলাকা কমিউটার ট্রেনটি ছেড়ে যায়। সেনাসদস্যরা এ সময় গফরগাঁও রেলস্টেশন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে ট্রেনটিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যান।
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা আবার শিবগঞ্জ রোড রেলক্রসিং, কাচারী রেলক্রসিং এলাকায় রেলপথ অবরোধ করলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরাতে চেষ্টা করেন। সেনাবাহিনী থানা–পুলিশ ও রেল পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। অপর দিকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া আক্তারুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়ায় তাঁর কর্মী–সর্মথকরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আনন্দ মিছিল বের করেন। তবে পৌর শহরে কোনো আনন্দমিছিল হয়নি।
গফরগাঁও রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার হানিফ আলী রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্টেশনের পাশের গোলন্দাজ রেলগেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সিগন্যাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে গফারগাঁও স্টেশন এলাকায় কোনো ট্রেন ক্রসিং করা যাবে না, শুধু চলাচল করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, রোববার মধ্যরাতের পর বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা ট্রেনগুলো ছেড়ে গেলেও আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে পুনরায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গোলন্দাজ গেট এলাকায় আগুন দিলে জারিয়া-ঝানজাইলগামী বলাকা কমিউটার ট্রেনটি আটকা পড়লে সেনাবাহিনী ও পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে বেলা ১১টার দিকে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে জামালপুরগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর ১২টার দিকে গফরগাঁও স্টেশনে এলে বিক্ষুব্ধরা সেটি অবরোধ করেন। রেলপথে বিভিন্ন স্থানে আগুন দেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রচেষ্টায় ট্রেনটি বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেন চলাচল এখনো স্বাভাভিক হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগতে পারে, তা বলা যাচ্ছে না।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপার আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিনি ১৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। গতকাল থেকে সব ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। আজ বিকেল পাঁচটা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
আজ রোববার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। আটকে থাকা ট্রেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখনো মাঠে কাজ করছি। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জায়গা মাটি, গাছ বা অন্য কিছু ফেলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলো আমরা অপসারণ করছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। এসব ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।’