
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে এই বিভাগে আটজনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে পাঁচজনই বরগুনার। বাকি তিনজন বিভিন্ন জেলার।
এ ছাড়া আজ শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে ১০১ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৪ জনই বরগুনার বাসিন্দা। দক্ষিণ উপকূলের এই জেলায় এক মাস ধরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। শনিবার ২৫০ শয্যার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ২৪১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফলে হাসপাতালে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবা স্থবির হয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতেই চিকিৎসক–নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সর্বশেষ শুক্রবার রাতে বরিশালের শের–ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান লাইলি বেগম (৪০) নামে এক নারী। তিনি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার খেকুয়ানি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বৃহস্পতিবার বরিশালের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে বরগুনা জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৮০ জন। এই সময়ের মধ্যে বিভাগে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন আটজন, পাঁচজনই বরগুনার। গত বুধবার বরগুনায় দুজন এবং বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান লাইলি বেগম নামে এক নারী।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, বর্তমানে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ৩৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ২৪১ জনই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। গত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনা জেলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ জন, বরিশালের শের ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন, বরিশাল সদর হাসপাতালে ৮ জন এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জন, পিরোজপুরে ১ জন ও ঝালকাঠি জেলায় ৫ জন। এ ছাড়া ভোলায় এই প্রথম তিনজন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। সেখানে কোনোক্রমেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে পুরো স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা প্রয়োজনীয় স্যালাইন, ওষুধ সরবরাহ করেছি। সেখানে চিকিৎসক সংকট ছিল, তা নিরসনে এরই মধ্যে আমরা নতুন করে চারজন চিকিৎসককে সেখানে নিয়োগ দিয়েছি। ঈদের ছুটি শেষ হলে আরও কয়েকজন চিকিৎসককে সেখানে পাঠানো হবে।’
বরগুনার মতো একটি উপকূলীয় জেলায় হঠাৎ করে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি এতটা জটিল হবে, তা ধারণার বাইরে ছিল উল্লেখ করে শ্যামল কৃষ্ণ বলেন, ‘আমরা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার, সাধ্যমতো তা নিশ্চিত করছি। তবে শুধু চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।’