
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টার মধ্যে আমরা এই আচরণ দেখতে পাচ্ছি যে তাঁরা এখন কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্বটা পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এনসিপির জেলা ও উপজেলার সমন্বয় সভা শেষে সারজিস আলম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘এই দায়সারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান–পরবর্তী একটা সরকার কাজ করতে পারে না। তাঁরা এত শহীদের ওপর, এত রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ওইখানে আছেন। তাঁরা যদি এখন জীবনের একটু থ্রেটের ভয় করেন, তাহলে তো ওই দায়িত্ব তাঁদের নেওয়া উচিত ছিল না।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘তাই স্পষ্ট কথা, তাঁরা যদি এত কিছু, এত বড় ত্যাগ এগুলোকে ভুলে গিয়ে শুধু ওইটুকু চিন্তা করেন, সবাই না গুটি কয়েক, তাঁরা যদি ওইটুকু চিন্তা করেন এবং ওইভাবে নেগোশিয়েশনের ভিত্তিতে আগামীতে কারা ক্ষমতায় আসবে, ওইটাকে চিন্তা করে তাঁদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, আমরা মনে করি দেশের মানুষের সামনে তাঁরা মুখ দেখাতে পারবেন না। কোথায় সেফ এক্সিট নেবেন, পৃথিবীতে সেফ এক্সিট নামের একটাই জায়গা, সেটা হচ্ছে মৃত্যু। এ ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তে যান, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে ধরবে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হোক, সামনাসামনি হোক।’
সারজিস আলম অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় লীগ নামে একটি দলকে নিবন্ধন দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ দলটির অস্তিত্ব বলতে টয়লেটের পাশে একটি ছোট ঘর ছাড়া কিছুই নেই। তিনি বলেন, যেকোনো দলকে নিবন্ধন দিতে হলে আগের মানদণ্ড অনুসরণ করলে চলবে না, সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই করতে হবে। যদি এটি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো প্রচেষ্টা হয়, জনগণ ও এনসিপি তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের ভালো মানুষেরা একত্র হয়ে যদি আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় করুক, এতে আমাদের কোনো সমস্যা থাকবে না। তবে একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন বাংলাদেশে অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়। এনসিপি তা কখনোই মেনে নেবে না।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই অংশগ্রহণ করবে উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘শাপলা প্রতীকে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করছে অথবা কারও চাপে পড়ে এমনটা করছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আস্থা ধরে রেখে কাজ করবে বলে আশা করি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘তিনি বলেছেন, যেই ভাইকে দেশে রেখে গিয়েছিলেন, তাঁকে আর দেখতে পারবেন না। তাঁর যে ঘরে সারা জীবনের স্মৃতি, সেই ঘর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলোয় আমাদের সহমর্মিতা থাকবে। আগামীর বাংলাদেশে আমরা আর এ ধরনের ঘটনা প্রত্যাশা করি না। বিএনপির অনেক নেতা–কর্মীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এগুলো আওয়ামী লীগ করেছে। সুতরাং স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের অর্থের বিনিময়ে অথবা কোনো সুযোগ-সুবিধার বিনিময় যেন আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়া না হয়, আমরা সেটাও দেখতে চাই।’
সমন্বয় সভায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ এনসিপির নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।