নুরুল হক মারা যাওয়ার পর কয়েক ফুট উচুতে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। কাবার আদলে কালো রং করায় (বাঁয়ে) এটি নিয়ে আপত্তি তোলেন আলেম–ওলামারা। পরে সেটি রং পরিবর্তন (ডানে) করা হয়
নুরুল হক মারা যাওয়ার পর কয়েক ফুট উচুতে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। কাবার আদলে কালো রং করায় (বাঁয়ে) এটি নিয়ে আপত্তি তোলেন আলেম–ওলামারা। পরে সেটি রং পরিবর্তন (ডানে) করা হয়

কয়েক ফুট উঁচুতে কবর, ‘শরিয়ত পরিপন্থী’ অভিযোগ তুলে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল নামের এক ব্যক্তিকে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বেদি তৈরি করে দাফন করা হয়েছে। এটিকে ‘শরিয়ত পরিপন্থী’ দাবি করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হকের আস্তানায় অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সভাপতি মাওলানা জালাল উদ্দিন প্রামাণিক। সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় রীতিনীতি বিকৃত ও কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁর আস্তানায় (দরবার শরিফ) ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগ করা হয়।

গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন নুরুল হক। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করলে জনরোষ তৈরি হয়। পরে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ মুচলেকা দিয়ে তিনি এলাকা ছাড়েন। কয়েক দিন পর আবার দরবারে ফিরে কার্যক্রম শুরু করেন। গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতে দরবারে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে প্রথম জানাজা ও ভক্তদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় তাঁকে দাফন করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় আলেম সমাজ। তাঁদের আন্দোলনের মুখে ইতিমধ্যে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এখনো কবর নিচে নামানো হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জালাল উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করায় তীব্র আন্দোলনের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন নুরুল হক। দীর্ঘদিন পর আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাঁকে পুনর্বাসন করেছে একটি কুচক্রী মহল। গত ২৩ আগস্ট তাঁর (নুরুল) মৃত্যুর পর ব্যাপারটা ঘনীভূত হয়। মৃত্যুর আগে নুরুল ১২ ফুট উঁচু বেদি তৈরি করেন। সেই বেদির ওপর তাঁকে কবর দেওয়া হয় এবং পবিত্র কাবার আদলে রং করা হয়। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। উত্তেজনা প্রশমনে প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে। আলোচনায় প্রথমে নুরুলের পরিবার এক সপ্তাহ সময় নিলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। তারা দুদিন আগে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিলেও কোনো উত্তর পাননি।

উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সংবাদ সম্মেলন। মঙ্গলবার সকালে গোয়ালন্দ উপজেলা মডেল মসজিদে

রাজবাড়ী জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মো. ইলিয়াস মোল্লা বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে নুরুল হকের কবর সমান না করা হয় এবং অন্যান্য দাবিদাওয়া পূরণ না হয়, তাহলে এর দায়িত্ব কে নেবে? প্রশাসন আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এর সমাধান করবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। অন্যথায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পরে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আইয়ুব আলী খান বলেন, নুরুল পাগলের কবর নিচু না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলতেই থাকবে। এটিকে ঠেকাতে যারা কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য খন্দকার আবদুল মুহিত, গোয়ালন্দ পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম মণ্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, সাইদুল সরদারসহ আলেম-ওলামারা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিরুষে নুরুল হকের ছেলে মেহেদী নূর জিলানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা ইমাম মেহেদীর দ্বীন প্রচারক ছিলেন। তিনি কখনো নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করেননি। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর ওসিয়ত মোতাবেক কিছুটা উচুঁ করে ইসলামের বিধান মেনে দাফন করা হয়েছে। বাইরে খোলা জায়গায় ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা থাকায় দরবারে জানাজা পড়া হয়। এখানে ১২ ফুট উচুঁ করার অভিযোগ সত্য নয়। তিন থেকে চার ফুট উঁচু হতে পারে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে। তবে কবর নিচু করতে ভক্ত ও খাদেমদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এক-দুদিনের মধ্যে করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।’