Thank you for trying Sticky AMP!!

অভাব দমাতে পারেনি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া দিনাজপুরের মাহফুজাকে

মাহফুজা আক্তার

বাবা অন্যের জমিতে চাষাবাদ করেন। বড় বোন সেলাইয়ের কাজ করেন। এ আয় দিয়েই সংসার চলে। পরিবারের এমন আর্থিক অবস্থায় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা মাধ্যমিকেই শেষ হওয়ার কথা ছিল মাহফুজা আক্তারের। তবে মাহফুজা নিজের লক্ষ্যে অটল ছিলেন। নিজের চেষ্টায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছেন তিনি। অবশেষে সফলতা ধরা দিয়েছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৪৫৭তম স্থান নিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

এ সাফল্যে মাহফুজার বাড়িতে খুশির বন্যা বইছে। তবে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার খরচ জোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে তাঁর পরিবার। মাহফুজার বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার তেঘড়া গ্রামে। বাবা হুসেন আলী একসময় সবজি বিক্রি করতেন। তবে এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। তবে হুসেন আলীর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই মাফুজার বড় বোন পড়াশোনা ছেড়ে এখন সেলাইয়ের কাজ করেন। তাঁদের একমাত্র ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

দুই কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা টিনের বাড়িতে থাকে মাহফুজার পরিবার। এ বসতভিটাই তাঁদের সহায়-সম্বল। বাড়ির পাশের তেঘড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন মাহফুজা। এরপর দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি। দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন মাহফুজা। মা-বাবার অভাবের সংসারে এতদূর আসা খুব সহজ ছিল না তাঁর জন্য।

মাহফুজা বলেন, জেএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি। এর পর থেকে পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দেন। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। শুরু হলো চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা। কিন্তু মেডিকেলে পড়তে হলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে হবে। বিজ্ঞানে পড়াশোনার খরচ বেশি। ওই সময় তাঁর বাবাও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটার সবজির দোকান বন্ধ হয়ে গেল। তখন মাহফুজার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

ওই সময় প্রতিবেশী বড় বোন আমরিন জাহানের কাছে পরামর্শ নিতে যান মাহফুজা। আমরিন দিনাজপুর সরকারি কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনভয়েজের সদস্য। পরে মাহফুজার বিষয়টি আমরিন গ্রিনভয়েজের অন্য সদস্যদের জানান। মাসিক তিন হাজার টাকা ও বই-খাতা-কলম কেনার খরচ বহনের সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। মাহফুজার মেধা আর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক বিশ্বজিৎ দাস, শাকিরুজ্জামান, আবদুল মোমেন, রাকিবুল ইসলামও মাহফুজার পাশে দাঁড়ান।

মাহফুজা বলেন, ‘প্রতিদিন ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতাম। পড়তাম আর ভাবতাম, যাঁরা আমাকে সহযোগিতা করছেন, তাঁদের জন্য হলেও আমাকে চান্স পেতে হবে। এখন সবার মুখ রাখতে পারছি। অনেকে ফুল-মিষ্টি নিয়ে দেখতে এসেছেন। এত ভালো লাগছে, যা বলে বোঝানোর মতো নয়।’

মাহফুজার মা রুবিনা বেগম বলেন, ‘হামার বংশত কাহো এত দূর পড়িবা পারে নাই। হারা অত বুঝিওনা। কিন্তুক হারা খুব আনন্দ পাইছি। গ্রামের সবায় দেখির আসোছে। নিজে কষ্ট করিছি, কিন্তু মেয়েটাক কষ্ট বুঝির দেই নাই।’

গ্রিনভয়েজের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবির বলেন, মাহফুজার মতো অনেকেই স্বপ্ন দেখলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না। মাহফুজার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর থেকে গ্রিনভয়েজের পক্ষ থেকে তাঁকে সাধ্যমতো সহায়তা করা হয়েছে। মাহফুজার মেডিকেলে ভর্তির জন্য গ্রিনভয়েজের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদের মাহফুজার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি।

মাহফুজার লক্ষ্য ফরেনসিক–বিশেষজ্ঞ হওয়ার। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মেয়েরা নাকি ফরেনসিকে আগ্রহ দেখান না। আমি চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই। আবার ফরেনসিক প্রতিবেদন তৈরি করার মাধ্যমে মানুষকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে মেডিকেলে পড়াশোনার খরচ কীভাবে চালাব, সেটা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।’