‘প্রিয় আব্বু আম্মু, সরি, পারলে আমাকে মাফ করে দিও। এত চাপ আর নিতে পারছি না। কলেজ সিলেকশনের সময় হয়তো মনেই ছিল না, বাবার জন্য খুব চাপ হয়ে যাবে।’
রাজধানী ঢাকার বি এফ শাহীন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. সাফায়েত হোসেন ওরফে ইউশার (১৮) লাশের পাশেই পড়ে ছিল এই কথাগুলো লেখা একটি চিরকুট। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার জিগাতলা মনেশ্বর রোডের একটি বাড়ির ষষ্ঠ তলা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ফেনীর শহরের পাঠানবাড়ি রোড এলাকার ‘দৈনিক ফেনীর সময়’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের ছেলে তিনি। ঢাকার কলেজটিতে ভর্তির পর থাকতেন জিগাতলার বাড়িটিতে। ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর মা-বাবা। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। ফেনীর দাগনভূঞার মোমারিজপুর গ্রামে তাঁর লাশ নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব অর রশিদ বলেন, সাফায়েতের মরদেহের উদ্ধারের পর পুলিশ তাঁর কক্ষে একটি চিরকুট খুঁজে পায়। চিরকুটে মা–বাবার প্রতি আবেগঘন বেশ কিছু কথা লিখে যান তিনি। তাতে আরও লেখা ছিল, ‘গত বছর এই দিনে বাবার হার্ট অ্যাটাকের পর জ্ঞান ফিরেই আমাকে খুঁজেছিলেন। আমি তখনো সিসিইউর সামনে দাঁড়িয়ে। ছুটে যাই বাবার কাছে। আমাকে ইউশা বলে ডাকতেই বুকের ভেতর ধক করে উঠেছিল। কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, “কিছুই হবে না আব্বু, ঠিক আছি। টেনশন করিস না।” আম্মু, এখন আর আমার জন্য টাকা পাঠাতে হবে না। ভালো থাকো তোমরা, আল্লাহ হাফেজ। ইউশা।’
সাফায়েতের চাচা আলী হায়দার বলেন, ‘ছেলের আকস্মিক মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার মা–বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সে কী কারণে আত্মহত্যা করেছে, বিষয়টি আমরা বলতে পারছি না। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হচ্ছে। আজ রাত নয়টায় ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মোমারিজপুর গ্রামে জানাজা শেষে সাফায়েতের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।’