বড় কুম্বের সৌন্দর্যের টানে দূর–দূরান্ত থেকে দর্শণার্থীরা ছুটে আসেন। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বড় ত্রিপুরাপাড়া এলাকায়
বড় কুম্বের সৌন্দর্যের টানে দূর–দূরান্ত থেকে দর্শণার্থীরা ছুটে আসেন। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বড় ত্রিপুরাপাড়া এলাকায়

বড় কুম্বের পথে পথে ছড়ানো রোমাঞ্চ আর বিস্ময়

এক পাশে কালো পাথরের দেয়াল অন্য পাশে ঘন ঝোপ। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে বয়ে যাচ্ছে ঝরনা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোত। বর্ষার খরস্রোতা পাহাড়ি ঝরনার পানির আঘাতে পাথরের বুকে তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত। সেখানে পানি জমে তৈরি হয়েছে স্বচ্ছ জলাধার। নাম তার বড় কুম্ব। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বড় ত্রিপুরাপাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে এই বড় কুম্বের অবস্থান।

বড় ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা শেফালিকা ত্রিপুরার মতে, বড় কুম্বের পানি কখনো শুকায় না। আর এর গভীরতাও কেউ কখনো জানতে পারেননি। এলাকার সবাই মিলে একবার ১০টি মেশিনের মাধ্যমে পানি সেচ দেওয়ার পরও এই বড় কুম্বের পানি শেষ করতে পারেননি বলে জানান। বড় কুম্বের পাশে রয়েছে একটা প্রাচীন শিবমন্দির। জুমচাষিরা এখানে পূজা দিয়ে জুম চাষ শুরু করেন। অনেকে জুমের ফসল ঘরে তোলার পর পূজা দিতে আসেন। তাঁদের বিশ্বাস, এতে মঙ্গল হয়। আর বৈসু উপলক্ষে এখানে পূজা হয়। তখন অনেক লোকের সমাগম হয়।

বড় কুম্বে যাওয়ার পথটা দুর্গম হলেও পথে পথে পড়বে ঝরনা, গ্রাম, গাছ–গাছালি। সব দেখতে দেখতে দূর হয়ে যাবে হাঁটার ক্লান্তি। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বড় ত্রিপুরাপাড়া এলাকায়

প্রায় দুই কিলোমিটার পাথুরে পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয় বড় কুম্ব। বিলাসী আরামদায়ক ভ্রমণ নয় বরং যাঁরা শ্রমসাধ্য রোমাঞ্চ ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য গন্তব্য হতে পারে বড় কুম্ব। তবে এখানে আসার পথটা দারুণ। পাহাড়ি গ্রাম, পাহাড়ের গা বেয়ে নামা ছোট ছোট ঝরনা, ছড়ার পাশে ফুটে থাকা বুনোফুল, নাম না জানা পাখি—এ সবই মুগ্ধ করবে পথে। পাড়ার কিশোররা স্বাগত জানাবে আপনাকে। তাঁরাই বড় কুম্ব যাওয়ার সঙ্গী হবে আপনার। তবে বড় কুম্ব যেতে মানতে হবে কড়া নিয়মকানুন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য অনি রঞ্জন ত্রিপুরা জানালেন, কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষেরাই বেড়াতে আসা শুরু করেছে বড় কুম্বে। অনেকে আসেন পাথর কিনতে। তাঁদের আমরা বড় কুম্ব এলাকায় যেতে দিই না।

বড়পাড়া পার হয়ে যেতে হবে বড় কুম্বে। যেতে হলে মানতে হবে কিছু নিয়মকানুন। ছবি তোলার সময় অবশ্যই অনুমতি নিয়ে তুলতে হবে। চিৎকার-চেঁচামেচি আর সাউন্ড বক্সে গান বাজানোর জায়গা নয় এটি। পাড়ার ও মন্দিরের নীরবতা বজায় রেখে চলতে হবে।

বড় কুম্বে যাওয়ার পথে দেখা হয়ে যেতে পারে সেখানকার গ্রামের কিশোরদের সঙ্গে। পথে পথে তারাও সঙ্গে দেবে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বড় ত্রিপুরাপাড়া এলাকায়

ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে বড় কুম্ব যেতে হলে নামতে হবে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বাজারে। মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে সিএনজি, নিজস্ব গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলে তবলছড়ি ডাকবাংলা বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে প্রায় ৫ কিলোমিটার গেলে বড়পাড়া। বড়পাড়া পর্যন্ত গাড়ি যেতে পারে। এরপর হাঁটা পথ।