দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় জীবন মহল বিনোদন পার্কের কমিউনিটি সেন্টারে ভাঙচুর হওয়া চেয়ার–টেবিল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার দুুপুরে তোলা
দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় জীবন মহল বিনোদন পার্কের কমিউনিটি সেন্টারে ভাঙচুর হওয়া চেয়ার–টেবিল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার দুুপুরে তোলা

দিনাজপুরে পার্কে হামলা

সুনসান নীরবতা জীবন মহলে, আতঙ্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

শুক্রবার বেলা দুইটা। ‘জীবন মহল’ পার্কের মূল ফটক বন্ধ। নেই নিরাপত্তা প্রহরী। ফটকে জিনিসপত্র পড়ে থাকতে হামলার চিত্র কিছুটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মিনিট দশেক হাঁকডাকের পর একজন সাড়া দিলেন। পরিচয় দেওয়ার পর ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। দরজা খুলে দেওয়া মধ্যবয়সী কর্মচারীর চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। পরে ঘুরে দেখালেন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাঞ্চন মোড় এলাকায় ‘জীবন মহল ফ্যামিলি পার্ক অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’। সেই পার্কে অসামাজিক ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে গতকাল বিকেলে সেখানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

পার্কটির মালিক আনোয়ার চৌধুরী ওরফে জীবন চৌধুরী। তাঁর বাড়ি বিরল উপজেলার দামাইল এলাকায়। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৪ সালে কাঞ্চন মোড়ে পৈতৃক জমিতে একটি গোলঘর (বাসভবন) ও একটি মেডিটেশন সেন্টার গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে সেখানে পিকনিক স্পট, কমিউনিটি সেন্টার ও মৎস্য খামার, সুইমিং পুল, মসজিদ, রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট গড়ে তোলেন। বর্তমানে সেখানে দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

জীবন মহল পার্ক রিসোর্টের ১১টি কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে তোলা

আজ দুপুরে পার্কের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই (১ নম্বর গেট) চোখে পড়ে সাদা সোনালি রঙের দ্বিতল মসজিদ। মসজিদ লাগোয়া একতলা মেডিটেশন সেন্টারে পোড়া আসবাবসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী দেখা যায়। সেখান থেকে পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে। মসজিদের পূর্বে জীবন চৌধুরীর গোলঘর তথা বাসভবন। গোলাকার ঘরের চারপাশে আসবাবের ধ্বংসস্তূপ। দক্ষিণে কমিউনিটি সেন্টারে ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিলে পড়ে আছে। পিকনিক স্পটেও ভাঙচুর করা হয়েছে।

জীবন মহলে রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্র, সুইমিংপুল আছে পৃথক বাউন্ডারিতে। এল আকৃতির দ্বিতল সাদা রঙের আবাসিক ভবনটিতে রয়েছে ১৫টি কক্ষ। ১১টি কক্ষের দরজা-জানালা, আসবাব ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন সামগ্রী। রিসোর্টের নিচতলায় সভাকক্ষে ধ্বংসস্তূপ দেখা গেল। রেস্তোরাঁর অবস্থাও প্রায় একই।

জীবন মহলের দ্বিতীয় গেট-সংলগ্ন স্থানে ‘জীবন উন্নয়ন সংস্থা’র কার্যালয়। সেখানেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

জীবন মহলের দ্বিতীয় গেট-সংলগ্ন স্থানে ‘জীবন উন্নয়ন সংস্থা’র কার্যালয়। সেখানে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমও পরিচালনা করতেন জীবন চৌধুরী। কার্যালয়ের যাবতীয় কাগজপত্র, খাতাপত্র নষ্ট করা হয়েছে। ফাইল ক্যাবিনেট ভেঙে অর্থও লুট করা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জীবন মহলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার মেডিটেশনের সেশন হতো। পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরা আসতেন। বিনা মূল্যে ওষুধও দেওয়া হতো। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি এমন হামলা হবে। আমরা মনে করেছিলাম তারা সমাবেশ করে চলে যাবেন। কিন্তু এমনভাবে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। ভাঙতে কিছুই বাকি রাখেনি। অনেকে হেলমেট পরেও এসেছিল।’

স্বাভাবিক সময়ে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকলেও হামলার পর থেকে সেখানে সুনসান নীরবতা। শুক্রবার দুপুরে

পার্কের মালিক আনোয়ার হোসেন ওরফে জীবন চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যারা ভাঙচুর করেছে, একটি মহল তাদের ভুল বুঝিয়েছে। জীবন মহল কোনো দরগা নয়। তিনি মানুষের জন্য ‘লাইফ শাইনিং মেথড’ নিয়ে কাজ করেন। অনেকটা কোয়ান্টাম মেথডের মতো। তিনি যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য এসব প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। অথচ তিনি বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রশাসনের লোকজন সঠিক সময়ে এলে এত ক্ষতি হতো না। ক্ষতির বিষয়টি হিসাব-নিকাশ করার পর আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।