কলারোয়া পৌর সদরের উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়ার পূজামণ্ডপে সোনালি আঁশে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। গতকাল শনিবার তোলা
কলারোয়া পৌর সদরের উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়ার পূজামণ্ডপে সোনালি আঁশে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। গতকাল শনিবার তোলা

সাতক্ষীরায় সোনালি আঁশে তৈরি প্রতিমা দেখতে মানুষের ভিড়

বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’ পাট—একসময় দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছিল। সেই পাট দিয়েই এবার তৈরি হয়েছে দুর্গা প্রতিমা। সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরের উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়ার পূজামণ্ডপে এই প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিমাটি দেখতে। পূজা শুরু হতে এখনো দুই সপ্তাহ বাকি, কিন্তু দর্শনার্থীদের কৌতূহল থামছেই না।

গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেল, মোট ১২টি প্রতিমা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর আর মহিষাসুরসহ সব কটি প্রতিমা মোড়ানো হয়েছে পাটের আঁশে। প্রতিটি প্রতিমার গায়ে সোনালি ঝলক, আলোয় যেন ঝলমল করছে পুরো মণ্ডপ। পাটের আঁশ ছোট ছোট টুকরা করে চিরুনি দিয়ে মসৃণ করা হয়েছে। এরপর মাটির প্রতিমার গায়ে একে একে বসানো হয়েছে আঁশ। রং ব্যবহার প্রায় হয়নি বললেই চলে, পাটের প্রাকৃতিক আভাই দিয়েছে সোনালি ঝলক।

প্রতিমাশিল্পী প্রহ্লাদ বিশ্বাস বলেন, ২১ জুলাই থেকে কাজ শুরু করেছিলেন তাঁরা। ২১ দিনের শ্রমে তৈরি হয় প্রতিমাগুলো। কাঠ, বাঁশ, মাটি ও পাট দিয়ে কাঠামো তৈরি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বসানো হয়েছে আঁশের টুকরা। শুধু আঁশ বসাতেই সময় লেগেছে পাঁচ দিন। মাঝে কিছু অংশে হালকা সোনালি রং ছিটানো হয়েছে ঝলক বাড়াতে। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে সোনালি আঁশ দিয়ে প্রতিমা তৈরি এটাই প্রথম। এর আগে ২০২৩ সালে একই মণ্ডপে চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরি হয়েছিল, যা সাড়া ফেলেছিল সারা জেলায়।

পালপাড়া পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পালাশ কুমার পাল বলেন, ‘১৯৮৩ সাল থেকে এখানে পূজা হয়ে আসছে। কয়েক বছর ধরে ভিন্ন আঙ্গিক আনার চেষ্টা করছি। ভক্ত-দর্শনার্থীরা যেন আনন্দ পান, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’ তিনি জানান, এ বছর প্রতিমা তৈরিতে ৫০ কেজি পাটের আঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। পূজার পাঁচ দিনে খরচ হবে আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসীরা এই ব্যয় বহন করছেন। সরকারি সহায়তায় এক টন চাল পাওয়া গেছে।

পূজামণ্ডপ দেখতে আসছেন এলাকার মানুষ

স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভু পাল বলেন, পাট দিয়ে প্রতিমা এত সুন্দর হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সোনালি ঝলকে চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে খরচটা একটু বেশি হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপন শীল বলেন, এবার জেলায় মোট ৫৯১টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি হয়েছে। পূজা শুরু হবে ২৮ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে কলারোয়ার মুরারীকাটি, দেবহাটার পারুলিয়া ও সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুরের প্রতিমাগুলো বিশেষভাবে নান্দনিক ও ব্যতিক্রমী।

২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। তার আগে মণ্ডপজুড়ে চলছে আলোঝলমলে সাজসজ্জা। আর সবার নজর এখন সেই সোনালি আঁশে গড়া দেবীমূর্তিতে, যা এই পূজার মৌসুমে সাতক্ষীরার দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করবে।