
দলীয় প্রতীক না থাকায় জমে উঠেছে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন প্রার্থী। তবে এর মধ্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান কাজী মোজাম্মেল হককে (আনারস) ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এম এ মান্নান চৌধুরীকে (মোটরসাইকেল) সমর্থন দিচ্ছেন। ভোট ছাপিয়ে উপজেলা নির্বাচন পরিণত হয়েছে সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর লড়াইয়ের মঞ্চ। তবে দুই নেতার বাইরে আলাদাভাবে প্রচারণা এগিয়ে নিচ্ছেন দুবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী (দোয়াত কলম)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা ডেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মান্নান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করে। ওই সভায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁকে সমর্থন দেন। একই দিন রাতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনীসহ বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ মিছিল করেন ওয়াসিকার অনুসারীরা। তবে এর দুই মাস আগে থেকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ঘোষণা করে মাঠে-ময়দানে জনসংযোগ করে আসছিলেন উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। প্রথমে সমর্থন পেলেও পরে তৌহিদুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দেননি সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খানকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী করা হলেও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে মন্ত্রণালয়ে রাখা হয়নি। এ নিয়ে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়। এ দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ রাতারাতি ওয়াসিকার সঙ্গে ভিড়ে প্রকাশ্যে কর্মসূচি দিলে প্রভাব পড়ে স্থানীয় রাজনীতিতে। গত দুই মাসে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় একের পর এক কর্মসূচি পালন করেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা। তারই প্রভাব পড়েছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও। সর্বশেষ ১৮ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ওয়াসিকার সঙ্গে রাজনীতি করার ঘোষণা দেন।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে দুই মাস ধরে নির্বাচনী ধারাবাহিক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীকে দলের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তবে ওই ঘোষণার পরও নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি তৌহিদুল হক চৌধুরী। বরং তাঁর সঙ্গে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বহু জ্যেষ্ঠ নেতা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।
তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী কাজী মোজাম্মেল হক উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী পরিবেশের মোড় ঘুরে যায়। মোজাম্মেলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অনেকে থাকায় জমে উঠেছে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী আমেজ।
উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ঘিরে আনোয়ারায় তিন পক্ষ একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে আছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রার্থী এম এ মান্নানকে জেতাতে ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এককাট্টা হলেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা মাঠে নেমেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হককে জেতাতে। ওই দুই প্রার্থীর বাইরে জেলা-উপজেলার বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে মাঠে আছেন তৌহিদুল হক চৌধুরী।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের জন্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো কাটিয়েছি। আশা করছি, জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন।’
উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত দশ বছর সুখে–দুঃখে জনগণের সঙ্গে ছিলাম, তাঁদের পাশে থেকেই উপজেলার উন্নয়ন করেছি। জনগণই আমার শক্তি। জয়ের ব্যাপারে পুরাই আশাবাদী।’
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমিসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যাপারে জনগণই ভালো জানেন। সবার আমলনামাও জনগণের হাতে আছে। জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবে। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ২৯ মে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ৭৪টি ভোটকেন্দ্র আছে। তার মধ্যে স্থায়ী ভোটকক্ষ ৪৮৪টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৫০টি। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯ হাজার ২২১ জন।