জামালপুরের মাদারগঞ্জে কয়েকটি সমিতি থেকে আমানতের টাকা উদ্ধারের দাবিতে উপজেলা পরিষদের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি। আজ সোমবার ‍দুপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে
জামালপুরের মাদারগঞ্জে কয়েকটি সমিতি থেকে আমানতের টাকা উদ্ধারের দাবিতে উপজেলা পরিষদের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি। আজ সোমবার ‍দুপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে

সমিতির হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবিতে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও

জামালপুরের মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছেন গ্রাহকেরা। আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলছিল।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে আবার ঘেরাও কর্মসূচি শুরু হবে।

‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভুক্তভোগীরা জানান, তাঁরা লাভের আশায় কষ্টার্জিত অর্থ সমবায় সমিতির নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আজ সকাল ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভুক্তভোগীরা প্রথমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন। দুপুরের দিকে তাঁরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের প্রাঙ্গণে যান। সেখানে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয়টি ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বক্তারা জানান, লাভের আশায় ২৩টি সমবায় সমিতিতে টাকা জমা করেছিলেন প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁরা। জামালপুর থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাঁরা। ভুক্তভোগীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। সমবায় সমিতির মালিকেরা আত্মগোপনে যাওয়ার পর তাঁরা মাদারগঞ্জ থানা ও জামালপুরের আদালতে একাধিক মামলা করেছেন। জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বাতিল করলে, গ্রাহকেরা আরও ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই নিবন্ধন বাতিল করা যাচ্ছে না। দেখুন, অনেক সভা ও মিটিং করা হয়েছে। সমিতির মালিকেরাও টাকা দিতে চাইছিলেন। কিন্তু টাকাগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেওয়া হবে—এ বিষয়ে আন্দোলনকারীরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। ফলে ওই প্রক্রিয়াও এখন থেমে গেছে। এই মুহূর্তে আমাদের আর কিছুই করার নেই।’

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।

মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন। আবার কিছু আন্দোলনকারী তাঁদের থামিয়েছেন। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে।