
শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘৫ আগস্টের বিভিন্ন শক্তির মধ্যে একটু ভুল–বোঝাবুঝি হচ্ছে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। ৫ আগস্টের সব শক্তিকে একসঙ্গে থাকতে হবে, যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে। অন্য কোনো দেশ যাতে বাংলাদেশে আগ্রাসন চালানোর সুযোগ না পায়, সাহস না পায়।’
আজ রোববার বিকেলে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সভায় তিনি শহীদ পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
আদিলুর রহমান খান আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধান কাজ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের শক্তিকে চিরস্থায়ীভাবে মাটিচাপা দেওয়া। ফ্যাসিবাদ বারবার আসার চেষ্টা করবে, সেটাকে প্রতিহত করা। ফ্যাসিবাদ যেন কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করার জন্য ছাত্র-জনতাকে ভিজিল্যান্স থাকতে হবে।’
সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচনের উত্তর হঠাৎ করে দেওয়া সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়, সেটা সবাই জানেন। এ ব্যাপারে আমি এককভাবে একটা কথা বলে গেলে কাজ হবে না। কারণ, এখানে আমাদের অবস্থানটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর। এর অন্যটা কী হতে পারত, সেটাও আপনারা জানেন।’
সভায় ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ শহরে আন্দোলনে মারা যাওয়া সজল মোল্লার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, সব শহীদের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। কোনো হয়রানি ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে যেসব অনুদান দেওয়ার কথা, সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় শহীদদের নাম সংযুক্ত করতে হবে।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের প্রায় ছয় মাস হয়ে গেছে। হতাহত পরিবারের অসংখ্য প্রশ্ন, তাঁদের যে আকাঙ্ক্ষা অবাস্তবায়িত অবস্থায় আছে, তাঁদের সন্তানদের যে আত্মত্যাগ, এখনো তা জ্বলন্ত। ৮ তারিখ যে সরকার শপথ নিয়েছে, এ সরকারের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব নিয়েছে। এই জুলাইয়ের যোদ্ধাদের একইভাবে দায়িত্ব নেবে। সেটার অধিদপ্তরও প্রায় তৈরি হয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারদের যেন সাপোর্ট দেওয়া যায়, আহত ব্যক্তিদের যেন পুনর্বাসন করা যায়, সে কাজগুলো হচ্ছে। তবে একটু ধীরগতিতে হচ্ছে।’
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘সবচেয়ে বড় জিনিসটা হচ্ছে, যারা অপরাধী, তাদের বিচারের প্রশ্নটা। বিচার তড়িঘড়ি করে হলে সঠিক হয় না। আবার দীর্ঘসূত্রতায়ও বিচার হয় না, ওটা বিচারহীনতা হয়ে যায়। আমরা সচেতন আছি যেন বিচার সঠিকভাবে হয় এবং অপরাধীরা ধরা পড়ে। যেসব অপরাধী পালিয় গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। আর যারা দেশে লুকিয়ে আছে, তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো দুর্বল। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা আপনাদের সহায়তায়।’
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ্র উপস্থিত ছিলেন। এদিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুন্সিগঞ্জে মারা যাওয়া ১৬টি পরিবারের হাতে অর্থসহায়তা তুলে দেওয়া হয়।