কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশা উপেক্ষা করে খেতে কাজ করছেন কৃষক কাশেম আলী। শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামে
কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশা উপেক্ষা করে খেতে কাজ করছেন কৃষক কাশেম আলী। শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামে

‘অ্যারাম টাটানো শীত আর দ্যাকা যায় না’

‘এ বছর খুপই শীত। অ্যারাম টাটানো শীত আর দ্যাকা যায় না। শীতের মদ্দি বেরাতি মন বলচে না, আবার না বেড়ালিও হচ্চে না। খ্যাত যদি না থাইক তো, অ্যাতো সকালে কষ্ট করে মাটে আসতাম না। যত্ন না কল্লি খ্যাতগুলো নষ্ট হয়ে যাবি। শুদো মানুষ না ভাই, হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল নিয়েও খুপ কষ্টে আচি। চাষি মানুষ কষ্ট তো কত্তিই হবে।’ আজ শুক্রবার সকালে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কৃষক কাশেম আলী (৫২)।

কাশেম আলীর বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের দক্ষিণপাড়ায়। গ্রামের খেত থেকে ধনেপাতা তুলছিলেন বাজারে বিক্রির জন্য। আলাপকালে কাশেম আলী জানান, কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার মধ্যেই সকাল ছয়টার দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের মাঠে এসেছেন ধনেপাতা তুলতে। একই মাঠে তাঁর পেঁয়াজ, রসুন, ধনেপাতা, লালশাকখেত ও ধানের বীজতলা আছে।

কাশেম আলী বলেন, ‘কুয়াশায় মাটে আসা খুপই কষ্ট। তারপরও আসতি হচ্ছে। খ্যাতগুলো না মারলি (ধনেপাতা তোলা), বাজারে না নিলি তো হবি না। ব্যাচাকিনা না কল্লি ট্যাকা পাবো কুতায়? সংসারের খরজ চালাব কী কইরে?’

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে খেতে কাজ করছিলেন কৃষক হাসানুজ্জামান, রুহুল আমীন, শামসুল হক ও আয়নাল হকসহ বেশ কয়েকজন। প্রচণ্ড শীতে শ্রমজীবী লোকজন পেড়েছেন বিপাকে।

আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার একই সময়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘন কুয়াশায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে নামতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।

গতকাল মধ্যরাত থেকে টিপটিপ করে ঝরা কুয়াশায় আজ সকালে দৃষ্টিসীমা কমে আসে। চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা পথে চলাচলকারী একটি দূরপাল্লার বাসের চালক মোশারফ হোসেন বলেন, গতকাল রাত ১২টার পর থেকে ঘন কুয়াশায় স্বাভাবিক চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাড়তি সময় লাগছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যযালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং জেলা পরিষদ থেকে জেলায় এখন পর্যন্ত শীতার্ত মানুষের জন্য ১৮ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি এনজিও এক হাজার কম্বল বিতরণ করেছে।