রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকায় মুক্তমঞ্চের নিচের দৃশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে সুন্দরবনের কথা। তাকালেই মনে হয়, ছোট্ট এক সুন্দরবন জেগে উঠেছে। শুক্রবার সকালে
রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকায় মুক্তমঞ্চের নিচের দৃশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে সুন্দরবনের কথা। তাকালেই মনে হয়, ছোট্ট এক সুন্দরবন জেগে উঠেছে। শুক্রবার সকালে

দুই পাশে গাছ, মাঝে খাল—রাজশাহীতে একটুকরা ‘সুন্দরবন’

সদ্য পানি নেমে গেছে। খালপাড়ে লেগে আছে নরম কাদা। খালে বেঁধে রাখা ভ্রমণপিয়াসীদের নৌকাগুলো দুলছে ছোট ছোট ঢেউয়ে। চারপাশে বনঘেরা পরিবেশ। বনতলে থিকথিকে কাদা—যেন শ্বাসমূলীয় বনের ছবি। প্রতিদিন এ দৃশ্য দেখতে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিয়াসীরা। দর্শনার্থীরা মনের খেয়ালে বলে উঠছেন—এ যেন একটুকরা ‘সুন্দরবন’।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী পরিচিতি পেয়েছে একটি সুন্দর শহর হিসেবে। পদ্মা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ শহরের নদীপাড় বিনোদনপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র। নগরের পাঠানপাড়ায় লালন শাহ মুক্তমঞ্চের নিচ দিয়ে খনন করা হয়েছে একটি নাতিদীর্ঘ খাল। উদ্দেশ্য, খরা মৌসুমে পদ্মার মূলধারা অনেক দূরে সরে গেলেও নগরের শিশুরা যেন নদীর উপস্থিতি অনুভব করতে পারে, খালে নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারে।

খালের ওপাড়ে নদীর চরে রোপণ করা হয়েছে নানা ধরনের গাছ। এ বছর সেগুলো হয়ে উঠেছে বেশ দর্শনীয়। খালের উত্তর পাড়ে আছে সিটি করপোরেশনের লাগানো নান্দনিক বৃক্ষের সারি। বর্ষায় এই খাল দীর্ঘ সময় পানি ধরে রেখেছে। এখন খালটিকে দেখলে মনে হয় সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট কোনো নদী।

কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতেই খালের দক্ষিণ পাড়ে চরের গাছগুলোর গোড়া দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বন থেকে জোয়ারের পানি সরে যাওয়ার পর বনের মধ্যে যেমন থিকথিকে কাদা দেখা যায়, তেমনই এক দৃশ্য। গতকাল শনিবার সকালে মুক্তমঞ্চের নিচে দাঁড়িয়ে এই অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। দুই পাড়ে বৃক্ষরাজি আর মধ্য দিয়ে খাল স্থানটিকে ‘মিনি সুন্দরবন’ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।

গত শুক্রবার সকালে দর্শনীয় স্থানটি ঘুরতে গিয়েছিলেন কলেজশিক্ষার্থী ঔড়ব। দেখেই প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘আরে, এ তো মিনি সুন্দরবন হয়ে গেছে। পানি কমছে, ঘাটে নরম কাদা। মনে হচ্ছে জোয়ারের পানি নেমে যাচ্ছে।’

লালন শাহ মুক্তমঞ্চের পাশেই স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক শফিকুল আলমের বাড়ি। তাঁকেও পাওয়া গেল সেখানে। বিষয়টি নিয়ে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললেন, জায়গাটি এবার ছোট্ট সুন্দরবনের মতো দেখাচ্ছে। বিকেলে প্রচুর মানুষ দেখতে আসেন।

রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকার মমতাজ বেগম প্রতিবছরই বর্ষার সময় মেয়েকে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। গতকাল সকালে তিনি মুক্তমঞ্চের পাশে মেয়েকে নিয়ে বসেছিলেন। বললেন, ‘এটা নদী দেখার এক অপূর্ব জায়গা। খুবই ভালো লাগে। এবার খালের ওপাড়ে লাগানো গাছগুলো বড় হয়েছে। এক জায়গায় বসে বড় নদী হয়তো দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু খালের দুই পাশের গাছপালা দেখে সুন্দরবন সুন্দরবন একটা “ফিল” পাওয়া যাচ্ছে।’