চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে, সড়ক, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় আজ দুপুরে তোলা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে, সড়ক, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় আজ দুপুরে তোলা

সীতাকুণ্ডে ভারী বৃষ্টিতে ডুবেছে ৭ গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি

ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পাঁচটি ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এসব গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির বড় অংশই এখন পানির নিচে। ঘরে পানি ওঠায় অনেক পরিবার চুলা জ্বালাতে পারেনি।

সীতাকুণ্ড আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ডে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে অতি ভারী বর্ষণ বলা হয়। আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত এমন বৃষ্টি থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

গত তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিতে উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের জঙ্গল ভাটিয়ারি, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের লালানগর, টেরিয়াইল, সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতর, কুমিরা ইউনিয়নের আলেকদিয়া, উত্তর মছজিদ্দা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা গ্রামের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে বারৈয়ারঢালা, সৈয়দপুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হেক্টর সবজিখেত পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া কুমিরা ও সোনাইছড়ির যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ, সেখানে প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের উত্তর মছজিদ্দা গ্রামের ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া এলাকায় প্রায় কোমরসমান পানি। এই এলাকায় অনন্ত শ খানেক বসতঘর ডুবে গেছে। অনেক পরিবারেই রান্না হয়নি। ডুবে যাওয়া সড়কে অনেককে জাল ফেলে মাছ ধরতেও দেখা গেছে। এই এলাকায় প্রায় ১০০টি বসতঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে, সড়ক, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় আজ দুপুরে তোলা

ওই এলাকার বাসিন্দা রুবেল দাসের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গভীর রাত থেকে টানা বর্ষণ শুরু হয়। ভোররাতের দিকে পাহাড়ি ঢলে তাঁদের ঘরের ভেতর পানি ঢুকে হাঁটু পরিমাণ হয়ে যায়। তাঁদের রান্নাঘরের চুলা ডুবে গেছে। ফলে খাবারদাবার কিনে খেতে হচ্ছে।

পাহাড়ি ঢলে পানিতে বারৈয়ারঢালা এলাকার ঘরবাড়ি, কৃষিজমিসহ চলাচলের সড়ক ডুবে গেছে। বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের লালানগর এলাকার ইউপি সদস্য দিদারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক আগে সড়কের ওপর থাকা একটি কালভার্ট নতুনভাবে করার জন্য ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। যার কারণে এখন সড়কটি ডুবে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াতে বেশি অসুবিধা তৈরি হয়েছে।

বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ব্লকে সব কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষিজমিতে এখন ধুন্দল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা ও লাউ চাষ রয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে জলাবদ্ধতায় এসব ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অতি ভারী বৃষ্টির কারণে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কুমিরা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দুটি এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় সেখানে ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের মাধ্যমে পুরো এলাকার খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। এরপর করণীয় ঠিক করবেন বলে জানান।