মায়ের কাঁধে হাত রেখে পেছনে বসেছেন মোতালেব হোসেন। মঙ্গলবার পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের চর এনায়েতপুর গ্রামে
মায়ের কাঁধে হাত রেখে পেছনে বসেছেন মোতালেব হোসেন। মঙ্গলবার পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের চর এনায়েতপুর গ্রামে

১০ বছর পর বৃদ্ধ মায়ের কাছে ফিরলেন ছেলে

নাতনি রমেছা বেগমকে ১০ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ আমেনা বেগম (৮৫)। সেই ক্ষোভ থেকে বাড়ি ছেড়েছিলেন একমাত্র সন্তান মোতালেব হোসেন (৬০)। তাঁর পর কেটে গেছে টানা ১০টি বছর। এত বছর বৃদ্ধ মায়ের খোঁজখবর রাখেননি ছেলে। নাতনির কাছেই থেকেছেন আমেনা বেগম। নাতনির অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে পলিথিনে ঘেরা একটি ঝুপড়িতে অমানবিক জীবন কেটেছে তাঁর।

মায়ের সঙ্গে অভিমান করে ছেলে মোতালেব হোসেন নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরে এসে বসবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। এখন তিনি বিত্তশালী। বৃদ্ধ মায়ের অমানবিক জীবনযাপনের খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় মোতালেবকে খুঁজে বের করে গতকাল মঙ্গলবার মায়ের কাছে পাঠান।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের চর এনায়েতপুর গ্রামের ওসমান মোল্লার স্ত্রী আমেনা বেগম। মোতালেব হোসেন ও হাজেরা বেগম নামের দুই সন্তান তাঁর। তাঁর স্বামী ওসমান মোল্লা অনেক আগেই মারা গেছেন।

বাবার মৃত্যুর পর মাকে ছেড়ে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করেন মোতালেব হোসেন। আর মেয়ে হাজেরা বেগম থাকছিলেন স্বামীর সঙ্গে। বিয়ের কয়েক বছর পরই হাজেরা মারা যান। তখন নাতনি রমেছার বয়স মাত্র ছয় মাস। নানি আমেনা বেগম সন্তানের মতো বড় করেন রমেছাকে। সেই নাতনিকে বড় করে বিয়ে দেন আমেনা। জীবনসায়াহ্নে এসে সেই নাতনির কাছেই কষ্টে দিন কাটছিল তাঁর। ঠাঁই হয়নি ছেলের পাকা বাড়িতে।

মায়ের কাছে ফিরে যেতে মোতালেব হোসেনকে উদ্বুদ্ধ করেন গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায়

রমেছা বেগম বলেন, তাঁর অভাব–অনটনের সংসার। নানিকে পলিথিনে মোড়া ঝুপড়িতে থাকতে হচ্ছে। ঠিকমতো খাবার খান না। অসুখে মেলে না পর্যাপ্ত চিকিৎসা। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু নানিকে দেখভাল করছেন। রমেছা আরও বলেন, ১০ শতাংশ জমি লিখে দেওয়ার কারণে তাঁর বড় মামা মোতালেব হোসেন মায়ের ওপর রাগ করে বাড়ি ছেড়েছিলেন। এ কারণে ১০ বছর মায়ের খোঁজখবর রাখেননি। অথচ বৃদ্ধ মানুষটি ছেলের শোকে পাগলপ্রায়। ছেলের কষ্ট সইতে না পেরে এখন মৃত্যুপথযাত্রী।

অসহায় মায়ের এমন করুণ পরিণতির বিষয়টি জানা ছিল না পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানের। তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রশাসনের লোকজন ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছেন। সেখানে গিয়ে মোতালেব হোসেনকে মায়ের পাশে বসে কাঁদতে দেখেছেন।

ইউএনও শ্রাবণী রায় প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃদ্ধ মায়ের ছবি দেখে হৃদয়ে দাগ কাটে তাঁর। পরে প্রশাসন থেকে লোক পাঠিয়ে মোতালেব হোসেনকে তাঁর দপ্তরে ডেকে আনা হয়। তাঁকে আইনি বিষয় জানানো হয়। সেই সঙ্গে মোতালেবকে ইহকাল ও পরকালের বিষয়ে বুঝিয়ে তাঁকে মায়ের কাছে পাঠানো হয়। বাকি জীবনটা মায়ের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মোতালেব।

মোতালেব হোসেন বলেন, এত বছর জাগতিক মোহে অন্ধ ছিলেন। ইউএনও তাঁর ভুল ভেঙে দিয়েছেন। মায়ের সঙ্গে এমন আচরণের জন্য তিনি অনুতপ্ত। এখন থেকে মায়ের সব দায়িত্ব তিনি পালন করবেন।