
নালার এক পাশে আলপথ, অন্য পাশে আবাদি জমি। এসব জমিতে চাষ হয়েছে বাদাম, মরিচসহ নানা ফসল। মানুষের চলাচল তেমন একটা নেই। তবু নালার ওপর প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু-কালভার্ট। নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে চলাচলের সড়ক না থাকলেও কী কারণে এখানে এই কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া এলাকায় গোরস্থানের পাশে হাকিমপুর-দগরবাড়ি থেকে বয়ে আসা একটি নালার ওপর সেতু-কালভার্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় এটি নির্মাণ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হঠাৎ কী কারণে সেখানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। নালার এক পাশে সরু আলপথ থাকলেও অপর পাশে পুরোটাই আবাদি জমি। সড়কবিহীন সেতু-কালভার্টের নির্মাণ স্থানীয়দের তেমন কোনো উপকারে আসবে না বলে দাবি তাঁদের। তবে কারও কারও দাবি, সেতুটি নির্মিত হলে বর্ষা মৌসুমে খেত থেকে ফসল তুলে আনতে কিছুটা উপকার হলেও সড়ক না থাকায় চলাচল সম্ভব নয়। এ জন্য সেতুর সঙ্গে সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মণ্ডলপাড়া এলাকায় শুকনা নালার ওপর নির্মাণাধীন সেতু-কালভার্টটির প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। শুধু ওপরের ঢালাই বাকি। পাকা সড়ক থেকে আলপথ হয়ে সেখানে যেতে হয়। তবে সেতুর দুই পাশ নিচু হওয়ায় ওঠানামা করা সম্ভব নয়। নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য পূর্ব পাশে একটি কাঠের সিঁড়ি বসানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জানি না এই ব্রিজটা কেন হচ্ছে। পেছনে সব ফসলের মাঠ। ব্রিজ থেকে কেউ যে নামবে, সেটারও সুযোগ নাই। অযথা সেখানে এত টাকা খরচ করে টাকাগুলো নষ্ট করা হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে অনেক খারাপ রাস্তা সংস্কারের কাজ করা যেত।’
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় থেকে দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করছে মেসার্স তানিয়া কনস্ট্রাকশন। ৪১ লাখ ১৯ হাজার ২২০ টাকা ৯০ পয়সা চুক্তিমূল্যে কাজটি শুরু হয় ২০২৪ সালের ৮ মে। শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর। তবে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫৮ মিটার ও প্রস্থ ১৪ ফুট।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম শাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে একজন অফিস সহকারীর মাধ্যমে কিছু তথ্য দিয়েছেন তিনি।
তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেখানে সেতুটি হচ্ছে, ওই নালার প্রস্থ ৩০ ফুট। দুই পাশের ৩০ ফুট করে মোট ৬০ ফুট সরকারি জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। পশ্চিম পাশে ফকিরপাড়া গ্রামের দিকে যাওয়ার জন্য সরকারি ম্যাপে রাস্তা আছে, তবে জায়গাগুলো বেদখল। এ ছাড়া পশ্চিম পাশে কয়েক হাজার একর জমিতে চাষ হয়। কৃষকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা চাই সেতুটি নির্মাণের পর নালার দুই পাড়ের সরকারি জমি উদ্ধার করে রাস্তা নির্মাণ করতে।’
জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।