দেশের বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন হাফিজ আশরাফুল হক বলেছেন, ‘এই বুদ্ধিজীবীরা খালি বুদ্ধি বিক্রি করে খায়। অমুক দল, তমুক দল, অমুকের অনুসারী; তাদেরকে মিথ্যা কথা বলে, মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে জাস্ট নিজের পকেটে আপনার হচ্ছে টাকাপয়সা ঢোকায়। সেই বুদ্ধিজীবীরা হয়তো একাত্তরে সেই ১৪ ডিসেম্বর মরে নাই। এরা যারা মারছে, আপনারা আরেকবার একটু দেখেন; ডেফিনেটলি পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া মেরেছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার বেলা ১১টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তনখোলা মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় আশরাফুল হক এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সভার আয়োজন করে। তাঁর ওই বক্তব্যের ১ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আজ সোমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজ ‘লিংকার্স ইন বরিশাল ইউনিভার্সিটি’তে পোস্ট করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অনেকেই এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মন্তব্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ তৌফিক আলম। বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ধীমান কুমার রায়ের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সানজিয়া সুলতানা, বিজয় ২৪ আবাসিক হলের প্রভোস্ট আবদুল আলিম বাছিরসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রজ্ঞা পারমিতা বোস।
সভায় শিক্ষক হাফিজ আশরাফুল হকের দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসররাই পরিকল্পিতভাবে এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই অপরাধের সঙ্গে সরাসরি ভারতকে জড়ানোর মতো কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই এমন দাবি ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া আর কিছু নয়।
এমন বক্তব্য দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘আমি বলেছি, এখন সময় এসেছে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের কারা হত্যা করেছে, সেই ইতিহাস পর্যালোচনার। চব্বিশের বিপ্লবে যেভাবে ভারত আমাদের সন্তানদের হত্যা করে ফ্যাসিস্টের সহায়তায়, এই চোখে দেখা ইতিহাস ও একাত্তরের ইতিহাস বিকৃতি নানাবিধ কারণে মনে প্রশ্ন জাগায়, ডেফিনেটলি পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না। এ ব্যাপারে গবেষণা হওয়া উচিত, তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।’
এ বিষয়ে উপাচার্য মোহাম্মদ তৌফিক আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম কোনো বক্তব্য দিয়েছে বলে আমি শুনিনি। আমি ওখানে উপস্থিত ছিলাম, উনি বিষয়টি অন্যভাবে বলেছেন, আপনি বিষয়টি উপস্থাপন করছেন ভিন্নভাবে।’ তাহলে শিক্ষক হাফিজ আশরাফুল কীভাবে বলেছেন, এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, ‘আমি একজেক্টলি বলতে পারব না, যাঁরা ওখানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সভা রেকর্ড করেছেন। পুরো বক্তব্য না শুনে বলা যাবে না।’