Thank you for trying Sticky AMP!!

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেন বাবা–ছেলে

হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিম মোল্লা ও তাঁর ছেলে রাজিবুল হাসান

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সেলিম মোল্লা এবং তাঁর ছেলে মো. রাজিবুল হাসান ওরফে রাজিব। রাজিবুল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

বাবা-ছেলের একসঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে এলাকায় সাধারণ ভোটার ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, ডামি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা ছেলেকে দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, মূলত ছেলেই নির্বাচন করবেন, আওয়ামী লীগের নেতাই ডামি প্রার্থী।

তবে এ নিয়ে বাবা ও ছেলে—উভয়ের সঙ্গে প্রথম আলো কথা বলেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, মূলত আওয়ামী লীগের নেতা সেলিম মোল্লাই প্রার্থী। তাঁর ছেলে ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে কোনো কারণে বাবার মনোনয়নপত্র বাতিল হলে ছেলে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

গতকাল সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এ দিনে বাবা-ছেলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সেলিম মোল্লা সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন এবং মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তবে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি না নেওয়ায় ওই নির্বাচনে শেষমেশ অংশ নিতে পারেননি। তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে সেলিম মোল্লা বলেন, চলতি বছরের শুরুতে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তাঁর কাছে সরকারের কোনো আর্থিক দেনা-পাওনাও নেই।

বাবা-ছেলে একসঙ্গে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতা সেলিম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তো শত্রু অনেক। আমি নির্বাচন করি, অন্য প্রার্থীদের অনেকেই চান না। তাঁদের (অন্য প্রার্থীরা) সমস্যা। আমি জনগণের সঙ্গে মিশি—এটা অন্য প্রার্থীদের সমস্যা। এ কারণে বাবা-ছেলে দুজনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রাখলাম। তারপরও পরেরটা পরে বোঝা যাবে।’

বাবা-ছেলের একসঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া রাজনৈতিক কৌশল কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হতে পারে; আমার পেছনে তো শত্রু লাগা রয়েছে। কোনো কারণে আমার মনোনয়নপত্র যদি বাদ (বাতিল) হয়, এ কারণে দুজনেই (বাবা-ছেলে) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তবে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কারণ নেই।’
মূলত প্রার্থী কে—এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম মোল্লা বলেন, ‘মূল প্রার্থী আমিই। রাজিব (ছেলে) মূলত ডামি প্রার্থী।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন সেলিম মোল্লার ছেলে রাজিবুল হাসান। তিনি বলেন, তাঁর বাবার অনেক শত্রু আছে। বিগত নির্বাচনে অনেকের শত্রুতার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এ কারণে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

রাজিবুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা বাবা-ছেলের মতের কোনো পার্থক্য নেই। শত্রুরা যাতে কূটকৌশল না করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই বাবা-ছেলে মনোনয়নপত্র সাবমিট (জমা) দিয়েছি।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেলিম মোল্লা ও ছেলে রাজিবুল হাসানের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা রয়েছে। মামলা দুটি আদালতে চলমান।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে হরিরামপুর উপজেলা এবং সিঙ্গাইর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৭ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল। এ ছাড়া প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ভোট গ্রহণ ৮ মে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান মিঞা বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতিমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সব কাজ শুরু করা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে।