নওগাঁয় বিদ্যুতের লাইনের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ শতাধিক তালগাছ ন্যাড়া

নওগাঁ পৌর শহরের বাইপাস সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ তালগাছ। এর মধ্যে সড়কের এক পাশে বাইপাস সেতু থেকে বোয়ালিয়া মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারে পাঁচ শতাধিক তালগাছের মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই তালগাছগুলোর পাশ দিয়ে গেছে বিদ্যুতের লাইন। নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) গাছগুলোর পাতা কেটে দিয়েছে। এ সম্পর্কে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কালাম বলেন, নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ লাইনের আশপাশের বিভিন্ন গাছের ডাল ও পাতা কাটা হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছ রোপণের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার ও পরিবেশবিদেরা। নওগাঁতে গত কয়েক বছরে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সড়কের দুই ধারে হাজারো তালগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যেই নওগাঁ পৌরশহরের বাইপাস সড়কের তালগাছের পাতা কেটে দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁ পৌরসভার বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, নব্বইয়ের দশকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নওগাঁ-সান্তাহার বাইপাস সড়কের দুই পাশে তালগাছগুলো রোপণ করা হয়। সেই তালগাছগুলো বড় হয়ে বছরের পর বছর ধরে শোভা ছড়াচ্ছে। বছরে দুবার বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে সড়কের এক পাশের তালগাছের পাতা ছেঁটে দেন। আর এবার একদম মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে গাছ কাটা উচিত নয়। কারণ, গাছ আমাদের জীবন বাঁচায়। কিন্তু ওনারা (বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন) কোনো কথা শোনেন না। শুধু এখানে নয়, বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের লাইনের জন্য গাছ কাটা পড়ে। গাছ না কেটে বিদ্যুতের খুঁটি একটু সরিয়ে বসালেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’

স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের দিকে নওগাঁ কাঁঠালতলী এলাকায় নেসকোর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া, তিলকপুর ও বক্তারপুর এবং বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে বাইপাস সড়কের দুই পাশে খুঁটি বসানো হয়। তখন তালগাছগুলো ছোট ছিল। গাছগুলো বড় হয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ বছর নেসকোর লোকজন বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে গাছগুলোর মাথা মুড়িয়ে দিচ্ছেন। এলাকাবাসী গাছগুলো রক্ষার জন্য বারবার আবেদন জানিয়েছেন। তবে কোনো কাজ হয়নি।

এ সম্পর্কে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কালামের তাঁর ধারণা, তালগাছগুলো লাইন বসানোর পর লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, লাইন সরাতে হলে অন্যের জমির ওপর দিয়ে যাবে হয়তো, তখন আবার স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দেবেন। লাইন স্থানান্তরের খরচও আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রয়োজনে লাইন সরালে বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ বহন করে আর স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রয়োজনে সরাতে হলে তাঁদের খরচ বহন করতে হয়।

নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যুতের লাইন ও তালগাছ দুটিই সরকারের জায়গায়। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।