চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার শাখা ধনাগোদা নদীতে কচুরিপানার স্তূপ। আজ সকালে নয়াকান্দি এলাকায়
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার শাখা ধনাগোদা নদীতে কচুরিপানার স্তূপ। আজ সকালে নয়াকান্দি এলাকায়

কচুরিপানা ও দূষণে ধুঁকছে শাখা ধনাগোদা, পরিষ্কারের উদ্যোগ নেই

একসময় নদীটি ছিল খরস্রোতা। নৌপথে স্থানীয় লোকজন সহজেই রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে চলাচল করত। আর নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো জেলে। এখন সেসব কেবলই অতীত। ’৭৯ সালে বেড়িবাঁধ হওয়ার পর পাল্টে যায় শাখা ধনাগোদা নদীর এই দৃশ্যপট।

শাখা ধনাগোদা নদী ধীরে ধীরে কচুরিপানা ও শেওলার দখল–দূষণে মৃতপ্রায়। নদীটি বাঁচাতে প্রশাসন বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তেমন উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার লোকজন।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে গাজীপুর থেকে কালীপুর পর্যন্ত শাখা ধনাগোদা নদীর অবস্থান। এটি প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট প্রশস্ত। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এটি শাখা ধনাগোদা নামে পরিচিত।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ওই নদীর গাজীপুর, নবুরকান্দি, নয়াকান্দি, লুধুয়া, রসুলপুর, শাহাবাজকান্দি ও কালীপুরসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, নদীটির অধিকাংশই কচুরিপানার দখলে। এখানে-সেখানে কচুরিপানার স্তূপ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠেছে শেওলা। শেওলা ও কচুরিপানার দাপটে নদী থমকে আছে। অনেক স্থানে শেওলা ও কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজন ময়লা-আবর্জনা ফেলে কয়েকটি স্থানকে ভাগাড় বানিয়ে ফেলেছেন। নদীর তীরে বেড়ে গেছে মশা–মাছির উপদ্রব।

শাখা ধনাগোদা নদীর তীরে জমেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। আজ সকালে উপজেলার গাজীপুর এলাকায়

কথা হয় উপজেলার নয়াকান্দি এলাকার রুহুল আমিন মিয়াজীর (৭৮) সঙ্গে। তিনি জানান, ’৯০ সাল পর্যন্ত নদীতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক ছিল। বিভিন্ন নৌযান চলত। এরপর ধীরে ধীরে নদীটি গ্রাস করতে থাকে কচুরিপানা। গত ৩০-৩৫ বছর কচুরিপানা ও শেওলা জমতে জমতে নদীটির আজ এই হাল। দীর্ঘদিন জমতে থাকা কচুরিপানা ও শেওলা পচে নদীর পানি মারাত্মক দূষিত হয়েছে। এ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

উপজেলার লুধুয়া এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, এই নদীতে আগে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো জেলে। স্থানীয় বাসিন্দারা মাছ শিকার করে নিজেদের আমিষের চাহিদা মেটাতেন। কচুরিপানার কারণে এখন সব শেষ। ধুঁকতে থাকা এই নদী এখন এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ। বৃষ্টির পানি নদীতে জমা হয়ে আশপাশের ফসলি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ও মৌখিকভাবে একাধিকবার জানানো হয়েছে, তবে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না।

বরাদ্দ না পাওয়ায় নদীটি কচুরিপানা ও শেওলামুক্ত করতে পারছেন না বলে জানান চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম জাহেদ। আর মতলব উত্তরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিল্লোল চাকমা বলেন, নদীটি বাঁচাতে প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে।