খুলনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, খুলনা, ২৮ নভেম্বর
খুলনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, খুলনা, ২৮ নভেম্বর

তিন জেলায় সুধী সমাবেশ

সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করে প্রথম আলো

কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষক, চিকিৎসক, রাজনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষের মনের কথা বলে প্রথম আলো। প্রান্তিক মানুষদের দুঃখ–দুর্দশা, সফলতা ও অধিকার আদায়ের কথা তারা তুলে ধরছে। সাহসের সঙ্গে পত্রিকাটি সত্য তথ্য প্রকাশ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিনির্মাণে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছে।

শুক্রবার বিকেলে দিনাজপুরে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনাজপুর জিলা স্কুল মিলনায়তনে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। একই সময়ে দিনাজপুর ছাড়াও খুলনা ও টাঙ্গাইলে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশে শিক্ষক, চিকিৎসক, রাজনীতিক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধি, কবি-সাহিত্যিক, নারীনেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

দিনাজপুর

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সুধী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম।

দিনাজপুরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। শুক্রবার বিকেলে দিনাজপুর জিলা স্কুল মিলনায়তনে

সমাবেশে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুল হক বলেন, ‘২৭ বছর ধরে একটি পত্রিকা সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে মানুষের কথা বলে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সৌরভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সত্যকে তুলে ধরছে। প্রথম আলো আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাক—এই প্রত্যাশা রাখছি।’

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিব আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্ম উজ্জীবিত হচ্ছে। ভালো নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, দিনাজপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। কৃষকেরা উৎপাদন করেন; কিন্তু অধিকাংশ সময় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এসব বিষয়ে প্রথম আলোর নিয়মিত খবর প্রকাশের অনুরোধ করেন তিনি।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম আলো ভাষাহীনের ভাষা। আজ প্রথম আলো ইনমা পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু প্রথম আলো আরও আগেই দেশের মানুষের হৃদয় জয় করতে পেরেছে।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক কান্তা রায় বলেন, ‘প্রথম আলোর প্রথম সংখ্যাটি পড়ে যেমন রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম, আজও সেই একই রকম রোমাঞ্চ অনুভব করি। প্রথম আলো এমন একটি পত্রিকা, যেখানে আবালবৃদ্ধবনিতা সবার সংবাদ পাওয়া যায়।’

দিনাজপুর শহর জামায়াতের সেক্রেটারি কামরুল হাসান বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে প্রথম আলোর একটা স্লোগান থাকে। একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে আমরা বিভোর, সেই সময় প্রথম আলোর স্লোগান সত্যই সাহস। এই সাহস নিয়ে আমরা স্বৈরাচারকে হটিয়ে নতুন বাংলাদেশে অবস্থান করছি।’

প্রথম আলোর কাছে পাঠকেরা নানা প্রশ্ন, প্রত্যাশা ও পরামর্শের কথা বলেন। তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাষাহীনের ভাষা হব, ক্ষমতাহীনের ক্ষমতা হব, আমরা সত্য কথা বলব। বিগত সরকারের প্রধান সংসদে বলেছিলেন, “প্রথম আলো জনগণের শত্রু, আওয়ামী লীগের শত্রু, দেশের শত্রু।” এরপরও প্রথম আলো টিকে থাকল কীভাবে? অনেক প্রতিষ্ঠান দখল হয়ে গিয়েছিল, সংবাদ প্রকাশ বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু প্রথম আলো বন্ধ হয়নি। এর কারণ, প্রথম আলোর প্রতি বিপুল পাঠকের আস্থা। এই পাঠকের আস্থাই আমাদের সত্য প্রকাশে অবিচল থাকতে সহায়তা করেছে।’

দিনাজপুরে প্রথম আলোর সুধী সমাবেশে অতিথিদের একাংশ। শুক্রবার বিকেলে দিনাজপুর জিলা স্কুল মিলনায়তনে

আনিসুল হক আরও বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ হবে, অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হবে। যেখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, চাকমা-গারো-সাঁওতালসহ নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকবে। দিনাজপুর অঞ্চলে দারিদ্র্য আছে, সেই আঞ্চলিক বৈষম্য দূর হবে। এই আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে প্রথম আলো যেখানে যতখানি দায়িত্ব পালন করা দরকার, তার সবটাই করবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোখলেছুর রহমান, দিনাজপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জলিল আহমেদ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য শীল, জেলা নাট্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি চিত্ত ঘোষ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দিনাজপুর শাখার সভাপতি মেহেরুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক একরামুল হক, জেলা যুবদলের নেতা মোকছেদুল ইসলাম, প্রথম আলোর সৈয়দপুর প্রতিনিধি এম আর আলম, বিরামপুর প্রতিনিধি নুরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা

প্রথম আলো পড়লে সময়ের সঙ্গে এগিয়ে থাকা যায়। বাংলাদেশ যে জায়গায় যেতে যাত্রা শুরু করেছে, সেই জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগুলো প্রথম আলো তুলে ধরবে। শুরু থেকেই শোষিত মানুষের অধিকারের প্রশ্নে, দেশের সম্পদ রক্ষায় ও নাগরিক স্বার্থে প্রথম আলো যে অবস্থানে থেকেছে, সেই নির্ভীকতা ও দায়বোধ ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে বলেই পাঠকদের প্রত্যাশা।

খুলনা নগরের উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বিকেল চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর খুলনা প্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল। সঞ্চালনা করেন খুলনা বন্ধুসভার সহসভাপতি এম এম মাসুম বিল্যাহ।

সুধী সমাবেশে অতিথিরা। শুক্রবার খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরীর মিলনায়তনে

সমাবেশে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘উদয়াচলের যে আলো, সেই আলো যদি আমরা গায়ে মাখি, তাহলে আমাদের প্রতিরোধশক্তি গড়ে ওঠে। প্রথম আলোকে আমরা সেভাবেই দেখি। প্রথম আলো শক্তির আধার হিসেবে কাজ করছে। পাঠক যেকোনো পত্রিকার জন্য একটি শক্তির জায়গা। সেই শক্তি প্রথম আলোর আছে। আমি চাই প্রথম আলো সেই রকমের একটি পত্রিকা হোক, যে পত্রিকা ফিল্টারিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। আমার চিন্তার জগৎকে উন্মুক্ত করে দেবে।’

খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম (মঞ্জু) বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবাদপত্রশিল্পে যে গুণটা প্রথম আলোর মধ্যে আছে, সেটা একটা কমপ্লিট নিউজ আপডেট করে উপস্থাপন করা। প্রথম আলো এই কাজটার ব্যাপারে সেরা। প্রথম আলো কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষে লেখে না, কারও পক্ষে সাফাই গায় না।’ তিনি বলেন, ‘জনগণকে প্রস্তুত করাটা সংবাদপত্রের একটা অন্যতম কাজ। প্রথম আলোতে যে মতামত ছাপা হয়, আমি অনেককে বলি এই মন্তব্য কলামগুলো পড়তে। বাংলাদেশ যে জায়গায় যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করেছে, সেই জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগুলো নিশ্চয়ই প্রথম আলো তুলে ধরবে।’

খুলনার খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্য থেকেও বারবার সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস প্রথম আলোর ছিল। যে–ই সরকার আসুক না কেন, দেখা গেল প্রথম আলোতে সত্য প্রকাশ করার মধ্য দিয়েই তারা ক্ষমতায় আরোহণের সুযোগ পেয়েছে, আবার ক্ষমতায় আসার পর যখন প্রথম আলো সমালোচনা শুরু করেছে, তখন আবার সেই সরকারই প্রথম আলোর বিরুদ্ধে লেগেছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে, সম্পাদকের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দিয়েছে। এই সত্য প্রকাশের সাহস আমাদেরও সাহসী ও অনুপ্রাণিত করে।’

সুধী সমাবেশে মতামত তুলে ধরছেন খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দা লুৎফুন নাহার। শুক্রবার খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে

গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলার আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রথম আলো তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। দুর্নীতি-লুটপাট থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ যে বঞ্চনার শিকার হয়, সেই সব সংবাদ প্রথম আলো নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দীন বলেন, প্রথম আলো সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখেছে, সত্যের পক্ষে কথা বলেছে। তবে সব পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হলে প্রথম আলোকে সব দলকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের খুলনা জেলা সভাপতি কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘খবরের ক্ষেত্রে মানুষ এখন অনলাইননির্ভর হয়ে গেছে। অনেক ভ্রান্ত খবর এখন আমরা পাই, বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। প্রথম আলো নির্ভুল সংবাদ দেওয়ার চেষ্টা করে, এটা ভবিষ্যতের জন্য আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।’

খুলনায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনারুল কাদির। উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, খুলনা, ২৮ নভেম্বর

অনুষ্ঠানে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সংবাদমাধ্যমের ভিত্তি ও শক্তি পাঠকের আস্থা। পাঠকের সেই আস্থা দিনে দিনে গড়ে ওঠে নিয়মিত সত্য ও নির্ভুল খবর প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আপনাদের আস্থা আমাদের সাংবাদিকতার প্রতি সেই দায়বদ্ধতা তৈরি করেছে।’ তিনি বলেন, সব সরকারের সময়েই প্রথম আলো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে ছিল। প্রথম আলোর একাধিক কর্মীকে সত্য লেখার জন্য কারাগারে যেতে হয়েছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবু পাঠকের সমর্থনে সব বাধা পেরিয়ে প্রথম আলো এগিয়ে গেছে।

সমাবেশে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দা লুৎফুন নাহার, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম আতিয়ার রহমান, রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদার, নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মারুফুর রহমান, পিটিআই খুলনার ইনস্ট্রাক্টর (সাধারণ) সঞ্জয় মণ্ডল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

টাঙ্গাইল

সত্য বলতে সাহস লাগে। প্রথম আলো শুরু থেকেই সেই সাহস দেখিয়ে আসছে। দিন শেষে সত্য খবরের জন্য প্রথম আলোকেই বেছে নিতে হয়। ভবিষ্যতেও প্রথম আলো সত্য প্রকাশে অবিচল থাকবে—পাঠক হিসেবে এটাই প্রত্যাশা।

টাঙ্গাইল শহরের ভিক্টোরিয়া পার্টি সেন্টারে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বিকেলে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর টাঙ্গাইলের নিজস্ব প্রতিবেদক কামনাশীষ শেখর।

সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু) বলেন, ‘শেখ মুজিব বাকশাল কায়েম করে গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, অবারিত করে দিয়েছিলেন। কাজেই বিএনপি সব সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে। সত্য কথা বলবেন, সত্য কথা লিখবেন—এটাই মানুষ প্রত্যাশা করে। প্রথম আলো তাদের মান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

টাঙ্গাইলে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ। শুক্রবার বিকেলে

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় সত্য প্রকাশ করে। এ জন্য পাঠকের আস্থা রয়েছে পত্রিকাটির ওপর। বিগত দিনগুলোতে অনেক সাহসী সংবাদ প্রথম আলো প্রকাশ করেছে।’ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা শাখার সদস্য আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করলে দেশ এগিয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে প্রথম আলো অনেক সংবাদ প্রকাশ করে আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।’ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব ও ভাসানী ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাহমুদুল হক বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে একটি ভালো পত্রিকা বলতে যা বুঝি, প্রথম আলো তাই।’

টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ বলেন, ‘প্রথম আলো ৫ আগস্টের আগেও চাপে ছিল, ৫ আগস্টের পরেও চাপে রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, প্রথম আলো সঠিক পথে আছে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) টাঙ্গাইল শাখার সহসভাপতি বাদল মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম আলোকে বিশ্বাস করা যায়। প্রথম আলোর তথ্য নির্ভরযোগ্য হয়। তাই আমার লেখায় প্রথম আলো থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করি।’

আইনজীবী হোসনে আরা আহমেদ বলেন, ‘সত্য প্রকাশ ও বস্তুনিষ্ঠতার জন্য প্রথম আলো প্রথম স্থানে রয়েছে। আজীবন আমরা প্রথম আলোকে প্রথম স্থানে দেখতে চাই।’

প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলছেন এক অতিথি। বৃহস্পতিবার বিকেলে

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে পাঠকেরা বিভিন্ন প্রত্যাশার কথা ও অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় সত্য প্রকাশ করে। কোনো সত্য আড়াল করতে চায় না। প্রথম আলো প্রত্যন্ত এলাকার অনেক সাফল্যের খবর, ইতিবাচক খবর গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে। পাঠকেরাই প্রথম আলোর মূল শক্তি। আমরা কোনো দলের পক্ষে নয়, নিরপেক্ষ থেকে সংবাদ প্রকাশ করি। প্রতিটি সরকারের আমলেই প্রথম আলোকে বিভিন্ন চাপের মুখে পড়তে হয়েছে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল হুদা, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফপিএবি) সভাপতি হারুন অর রশিদ, টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিকুল ইসলাম, বেসরকারি সংগঠন এসএসএসের চেয়ারম্যান কাজী জাকেরুল মওলা, জাতীয় কবিতা পরিষদের টাঙ্গাইল শাখার সভাপতি অনিক রহমান, ক্রীড়া সংগঠক কামরুন্নাহার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের টাঙ্গাইল শাখার সাধারণ সম্পাদক সহিদ মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যপ্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজিজুর রহমান, উদীচীর টাঙ্গাইল জেলা সংসদের সভাপতি দেবাশীষ দেব, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, নাট্য সংগঠক সাম্য রহমান, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রিয়াজুল মওলা, টাঙ্গাইল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।