
নেত্রকোনায় শোবার ঘর থেকে কৃষক হেলাল উদ্দিনের (৫৮) হাত-পা ও মুখ বাঁধা লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। একটি ষাঁড় চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় হেলাল উদ্দিনকে তাঁর স্ত্রী বেদেনা আক্তারের (৪০) সহায়তায় তিনজন মিলে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ নিয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার আগে গ্রেপ্তার হওয়া বেদেনা আক্তার আদালতে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক দাম প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত হেলাল উদ্দিন সদর উপজেলার নারিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আশ্রাব আলীর ছেলে। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন।
এলাকাবাসী, নিহত ব্যক্তির পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে খাবার খেয়ে হেলাল উদ্দিন শুয়ে পড়েন। ঘরটির একটি বিছানায় তিনি একা ছিলেন। অন্য বিছানায় স্ত্রী বেদেনা আক্তার তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে ঘুমান। পরদিন রোববার ভোরে বেদনা বাড়ির লোকজনকে জানান ভোররাত আনুমানিক সোয়া চারটার দিকে তিনি টয়লেটে যান। কিছুক্ষণ পর ঘরে ফিরে স্বামীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধারসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর স্ত্রীকে আটক করে।
এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে গতকাল দুপুরে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক চম্পক দাম বলেন, আদালতে বেদেনা আক্তার জবানবন্দিতে বলেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে কয়েকজনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ করেছেন। পাওনাদারেরা এখন টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। তাই গোপনে তাঁর বাবার বাড়ি বারহাট্টা উপজেলার সেমিয়া দুধকুড়া গ্রামের লিটন মিয়ার (৫০) সঙ্গে চুক্তি করেন, তাঁর স্বামীর হেলাল উদ্দিনের ষাঁড়টি চুরি করে বিক্রি করার জন্য। ষাঁড় বিক্রির টাকা থেকে লিটনকে তিনি ১০ হাজার টাকা দেবেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেদেনা আক্তার গত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে লিটন মিয়াকে ফোন করে বলেন, তাঁর স্বামী এখন ঘুমিয়ে গেছেন, গরুটি চুরি করা সহজ হবে। কিছুক্ষণ পর লিটন মিয়া নারিয়াপাড়া গ্রামের রিয়েল মিয়াসহ চারজন মিলে গরু চুরি করতে গেলে হেলাল উদ্দিন টের পেয়ে যান। তিনি এতে বাধা দিতে গেলে স্ত্রীসহ পাঁচজন মিলে হেলালকে মুখ, হাত-পা বেধে গলা কেটে হত্যা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা চম্পক দাম বলেন, বেদেনা আক্তারের তথ্য অনুযায়ী গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে লিটন মিয়া ও রিয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁদের আদালতে তোলা হবে। লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় পাঁচটি চুরির মামলা আছে।
নেত্রকোনা মডেল থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল মামুন সরকার বলেন, ‘আমরা অতি অল্প সময়ে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনসহ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। ঘটনায় জড়িত অন্য দুজনকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।’
নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার সহজ সরল ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’