
ময়মনসিংহের ত্রিশালে ১০ দিন আগে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্তের পর জানা যায়, তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান (বাইক রাইডার)। তাঁর মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করার জন্য তাঁকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাঁদের মধ্যে দুজন গতকাল বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পিবিআইএর ময়মনসিংহ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআইএর পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার এসব তথ্য জানান। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে ত্রিশালের বৈলর ইউনিয়নের বৈলর কামারপাড়া এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার বিস্তারিত জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পিবিআই।
সংস্থাটি জানায়, পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আঙুলের ছাপ নিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে। নিহত ব্যক্তির নাম জুবায়েদ আহমেদ (৩১)। তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার পালগাঁও গ্রামের সামাদ তালুকদারের ছেলে। বাইক রাইডার হিসেবে তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩০ ডিসেম্বর ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মাত্র ৯ দিনের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পিবিআই। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোড় এলাকা থেকে নাজমুল ইসলাম (৩০), আবুল কাশেম ওরফে সোনা মিয়া (৫৫) ও আবদুল আজিজ ওরফে আনিছকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়।
এর মধ্যে নাজমুল ত্রিশালের বৈলর এলাকার জয়নাল আবেদিনের ছেলে, কাশেম ও আজিজ বকশীগঞ্জের বাট্টাজোড় উজানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের কাছ থেকে নিহত জুবায়েদের মোটরসাইকেলটি জব্দ করে পিবিআই। গ্রেপ্তার তিনজনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠালে নাজমুল ও কাশেম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার আসামি নাজমুলের বাড়ি ত্রিশালে। তিনি পাঁচ–ছয় বছর ধরে টঙ্গীতে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করেন। নিহত জুবায়েদ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাইক রাইডার হিসেবে কাজ করেন। গত ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে জুবায়েদ ভাড়ার জন্য টঙ্গী স্টেশন রোডের মাথায় দাঁড়ালে আসামি নাজমুলের সঙ্গে দেখা হয়। নাজমুল টঙ্গী থেকে ময়মনসিংহ শহরে আসা-যাওয়ার কথা বলে জুবায়েদের মোটরসাইকেলভাড়া নেন। ত্রিশালের বৈলরে পৌঁছানোর পর নাজমুল তাঁর চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে পাওনা টাকা নেওয়ার কথা বলে জুবায়েদকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। একপর্যায়ে নাজমুল জুবায়েদের গলায় থাকা চাদর দিয়ে ফাঁস দিয়ে তাঁকে হত্যা করেন এবং জুবায়েদের মুঠোফোন ও মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান।
রকিবুল আক্তার দাবি করেন, নাজমুল নিহতের মুঠোফোনটি ধানিখোলা বাজারে এক মিস্ত্রির কাছে ২০০ টাকায় বিক্রি করে মোটরসাইকেল নিয়ে বকশীগঞ্জে গিয়ে আত্মগোপন করেন। পরে নাজমুল মোটরসাইকেলটি বাট্টাজোড় এলাকায় তাঁর পরিচিত আবুল কাশেমের কাছে বিক্রি করেন। কাশেম সেই মোটরসাইকেলটি তাঁর ভাতিজির স্বামী আজিজের হেফাজতে রাখেন। মূলত মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের জন্যই জোবায়েদকে হত্যা করা হয়।