দ্বন্দ্বে দ্বন্দ্বে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ৩ বছর পার, নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ

গত তিন বছরে এক দিনও তাঁরা একসঙ্গে বসেননি। এতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র
কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছেই। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে দ্বন্দ্বেই তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির তিন বছর পার হয়ে গেছে। গত তিন বছরে এক দিনও তাঁরা একসঙ্গে বসেননি। এতে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমানসহ ৮–১০ জন সদস্য আহত হন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বিকেলে শহরের স্টেশন রোড এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের একাংশ।

ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৮ বছর পর ইটনা উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয় গত মঙ্গলবার। ইটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ যোগ দেন। তাঁদের ফুল দিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমানের নেতৃত্বে একটি পক্ষ পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় অবস্থান নেয়। অন্যদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষও ফুল নিয়ে জড়ো হয়। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ওই এলাকায় আসার আগেই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে ছাত্রলীগ নেতা লুৎফর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, সাবেক সহসভাপতি আসিফ ইকবাল, সাবেক সদস্য সাগর দাসসহ কয়েকজন আহত হন। পরে বিকেলে জেলা শহরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ওই অংশের নেতা-কর্মীরা।

আহত ছাত্রলীগ নেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের ফুল দিতে গিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লোকজনের মাধ্যমে হামলার শিকার হয়েছি। হামলায় আমিসহ ৮–১০ জন আহত হয়েছি। এতে চারজন সদর হাসপাতালে ভর্তি আছি। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেব।’

তবে মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাঁরা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। আনোয়ার হোসেনকে কমিটির সভাপতি, ফয়েজ উমানকে সাধারণ সম্পাদক ও লুৎফর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ওই তিনজনকে দিয়ে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগ চলছে।

কিশোরগঞ্জে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আগমন উপলক্ষে চার দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে ওই তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বাতিলের দাবি জানান লুৎফর রহমান। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এদিকে গত শনিবার জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলের দাবিতে একাংশ বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লুৎফুর রহমান বলেন, গঠনতন্ত্র না মেনে কোনোরূপ যাচাই–বাছাই ও নেতৃত্বের দক্ষতা মূল্যায়ন না করেই কেন্দ্রীয় কমিটি ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই তিন সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয়। অথচ গঠনতন্ত্রের ২১ (ক) ধারা অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য জেলা কমিটি অনুমোদন দিতে হয়। তবে তৎকালীন ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য বারবার নির্দেশ দিলেও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তা উপেক্ষা করছেন। তবে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করার নামে অছাত্র, বিবাহিত, মাদকাসক্ত এবং বিএনপি-জামায়াত শিবিরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কমিটি বিলুপ্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় লুৎফর রহমানকে। গত রোববার রাতে সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাঁকে কারণ দর্শানোর ওই নোটিশ দেওয়া হয়।

ওই নোটিশের বিষয়ে লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা একই কমিটির নেতৃত্বে আছি। কাজেই জেলা কমিটির প্যাডে নোটিশ দেওয়ার এখতিয়ার নেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। সেটি পারে কেবল কেন্দ্রীয় কমিটি।’

সাড়ে তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারার বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনার কারণে প্রায় দুই বছর লকডাউন ছিল। ফলে কোনো কার্যক্রম করা যায়নি। এখন উপজেলা কমিটিগুলো করা হচ্ছে। এরপরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।