ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় যাত্রীবাহী ও মাহিন্দ্রা অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জনের মৃত্যুর খবরে দুর্ঘটনাস্থল দেখতে আসেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। আজ সকালে কাজিয়াকান্দা গ্রামে
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় যাত্রীবাহী ও মাহিন্দ্রা অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জনের মৃত্যুর খবরে দুর্ঘটনাস্থল দেখতে আসেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। আজ সকালে কাজিয়াকান্দা গ্রামে

৮ জনের প্রাণহানি

দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যু দেখেননি কাজিয়াকান্দার মানুষ

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কাজিয়াকান্দা গ্রাম। ফুলপুর পৌর এলাকার এই গ্রামের ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়কে গতকাল শুক্রবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আটজনের প্রাণহানি ঘটেছে। একসঙ্গে এত মানুষের এমন মৃত্যু দেখেননি গ্রামের বৃদ্ধরাও। দুর্ঘটনার পর এলাকাটি আজ শনিবার সকালেও যেন শোকে স্তব্ধ।

আজ সকাল নয়টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল কাজিয়াকান্দা গ্রামের ইন্দিরাপাড় এলাকায় নানা বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় দেখা যায়। স্থানটির এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনের ভাঙা কাচের টুকরা ও লোহালক্কড়। এসব দেখে আক্ষেপ করছিলেন তাঁরা। আর পাশেই সরু রাস্তাটি দিয়ে দ্রুতগতিতে চলছিল কয়েকটি যানবাহন। এসব চালককে ধীরে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষক রুহুল আমিন (৭৮)।

গতকালের দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, একটি লরি (ট্রাক্টর) নষ্ট হয়ে হালুয়াঘাটমুখী সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায় দ্রুতগতির মাহিন্দ্রাটি (অটোরিকশা)। মুহূর্তেই মাহিন্দ্রাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। বিকট শব্দ শুনে দুর্ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান তিনিসহ আরও কয়েকজন। সংঘর্ষের পর মাহিন্দ্রাটি বিদ্যুতের খুঁটিতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। এর ভেতরে থাকা একটি মানুষও নড়াচড়া করতে পারেননি। সবাই একেবারে চিড়েচ্যাপটা হয়ে যান।

এই পর্যায়ে জামাল উদ্দিন (৪০) নামের আরেক বাসিন্দা বলে ওঠেন, ‘দুর্ঘটনার পর দৌড়ে এসে গাড়ির নিচ থেকে মানুষ টাইন্না তুলছি। মানুষগুলো বিকৃত হয়ে গেছিন, সবাই ছিল রক্তাক্ত ও চেপটানো। এত মরণ এই গেরামের মানুষ দেখে নাই।’

দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীবাহী বাস ও মাহিন্দ্রাটি ফুলপুর থানায় নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। আজ সকাল ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায় ট্রাক্টরের ওপরে তুলে আনা হয়েছে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাহিন্দ্রাটি। পাশেই দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি রাখা। বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে গেছে বাসটির ভেতরের অংশ। এসব যানবাহন দেখছিলেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষার্থী। এ সময় কথা হয় আবদুর হামিদ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাহিন্দ্রাটির যে অবস্থা হয়েছে, তাতে কোনো মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না।’

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে থানা থেকে ছোট ভাই কাজিম উদ্দিনের মরদেহ (২৮) নিতে আসেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গুড্ডিমারী গ্রামের আবুল কালাম আজাদ। গতকালের দুর্ঘটনার সময় অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন কাজিম। আবুল কালাম জানান, কাজিম তিন বছর ধরে হালুয়াঘাটে ইটভাটার খননযন্ত্রচালকের কাজ করতেন। তাঁর এক বছর আট মাস বয়সী একটি ছেলে আছে।

ফুলপুর থানা চত্বরেও দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন ঘিরে উৎসুক জনতা। আজ সকালে তোলা

এ সময় থানা চত্বরে কথা হয় ফুলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুকুল সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে মাহিন্দ্রা ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও একজন নারী। পরিবারগুলোর কোনো অভিযোগ না থাকায় ছয়জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে, সেগুলোও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ময়মনসিংহের মোটরযান পরিদর্শক জহির উদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত গতি ও চালকের অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। একই কথা জানান ফুলপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার লুৎফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজে যাই। সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে, ওভারটেকিং ও বেপরোয়া গতির কারণেই এই দুর্ঘটনা।’

এ দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাদি।