মা-বাবা আমার ওপর অখুশি নন
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের দরগাগট্টি গ্রামের আছিয়া আক্তারের বয়স ১৫ বছর। সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবার তার বিয়ের আয়োজন করেছিল। তবে ২০ নভেম্বর সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন করে নিজের বিয়ে ঠেকায় আছিয়া। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রবীর কান্তি বালা।
বিয়ে ঠেকানোর পর স্কুলে গিয়েছিলে?
আছিয়া: হ্যাঁ। সহপাঠীরা খুব খুশি।
Also Read: থানায় ফোন দিয়ে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাল কিশোরী
শিক্ষকেরা কিছু বলেননি?
আছিয়া: শিক্ষকেরাও বাহবা দিয়েছেন। পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। বলেছেন, আমি ভালো কাজ করেছি।
ঘটনার পর তোমার মা-বাবা কী বলেছেন?
আছিয়া: তাঁরা আমার ওপর অখুশি নন। বলেছেন, তাঁদের চিন্তাটি ভুল ছিল।
বিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়ার চিন্তাটি কেন এল?
আছিয়া: আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমাদের স্কুলে এবং গ্রামে দেখেছি পড়াশোনা করা অবস্থায় যে মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়, তাদের আর পড়াশোনা করা হয় না। তারা স্কুলে আসে না। আমার মনে হয়েছিল, আমার অবস্থাও তেমনই হবে।
বাল্যবিবাহ আইনে নিষিদ্ধ, সেটা কি তুমি জানতে?
আছিয়া: জানি। তবে এ বিষয়ে স্কুলের স্যারদের (শিক্ষক) কখনো আলাপ করতে দেখিনি। গ্রামের মানুষদেরও দেখিনি আপত্তি করতে।
বাল্যবিবাহ হলে কী ক্ষতি হয়, তা কি তুমি জানো?
আছিয়া: ভালোভাবে জানি না। তবে এটুকু জানি, বাল্যবিবাহ হলে সেই মেয়ের আর পড়াশোনা হয় না। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না।
তুমি পড়াশোনা করে কী হতে চাও?
আছিয়া: শিক্ষক হতে চাই। গ্রামে অনেক শিশুকে দেখি তারা পড়াশোনা করে না। আমার এক ভাইকে বাবা স্কুলে পাঠাতে পারেননি। আমি এই শিশুদের স্কুলে নিয়ে পড়াতে চাই।
ওসি তোমার বিয়ে বন্ধ করার পর তোমাকে পড়াশোনার খরচ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
আছিয়া: আমি ইংরেজি ও অঙ্কে কাঁচা। ওসি সাহেব স্কুলের দুজন শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছেন আমাকে ইংরেজি পড়াতে ও অঙ্ক শেখাতে। আমি প্রতিদিন সকালে স্কুলে গিয়ে ওই দুই স্যারের কাছে পড়ি। তিনি (ওসি) আমাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন।
তোমার পরিবার কি তোমার পড়াশোনার খরচ দিতে পারে?
আছিয়া: আমরা খুব দরিদ্র। কোনো জমি নেই। বাবা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। তিনি পড়াশোনার খরচ চালাতে পারেন না।
শিশুদের পড়িয়ে কিছু আয় করার সুযোগ কি তোমার আছে?
আছিয়া: আমাদের গ্রামে এমন শিশু পাওয়া কঠিন। তারপরও চেষ্টা করব।
নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছ। অন্য কারও বাল্যবিবাহ হতে দেখলে কী করবে?
আছিয়া: যদি জানতে পারি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব। কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে জানার বাইরে। হঠাৎ দেখি আমার সহপাঠী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। পরে শুনি তার বিয়ে হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
-
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি কী সমস্যা তৈরি করছে, কেন উদ্বিগ্ন সবাই
-
তৃতীয় টি–টোয়েন্টি: চট্টগ্রামেই সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ
-
জেলেনস্কিকে হত্যার রুশ ষড়যন্ত্রে যুক্ত অভিযোগে ইউক্রেনের দুই কর্নেল গ্রেপ্তার
-
নির্বাচনে যেভাবে একচেটিয়া জয়ের পরিকল্পনা করেছে মোদির বিজেপি
-
নাশতার প্যাকেটের সঙ্গে সাংবাদিকদের টাকা দিল ন্যাশনাল ব্যাংক