‘ভুক্তভোগী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়
‘ভুক্তভোগী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়

চাঁদার জন্য অপহরণ-নির্যাতনের মামলাকে ‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন’ বললেন রাজশাহীর যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা

রাজশাহীতে চাঁদার জন্য ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর নির্যাতনের অভিযোগে থানায় করা মামলাকে মিথ্যা ও ‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন’ বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন আসামি ও যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘ভুক্তভোগী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার আসামি রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানি, বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম ও রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হকসহ অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত বুধবার রাতে ৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন আবাসন নির্মাণ ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ ছিল, আসামিরা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছেন। এ ছাড়া থানায় নিয়ে চাপ দিয়ে মাত্র ২৭ লাখ টাকার বিনিময়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক ভবনের ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট যুবদল নেতা মোজাদ্দেদ জামানির নামে লিখে দিতে বায়নানামার চুক্তিপত্রে সই দিতে বাধ্য করা হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘোড়ামারা এলাকায় ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকার বেশি। পাওনা ২৭ লাখ টাকায় ওই ফ্ল্যাট নিতে মোজাদ্দেদ জামানি বায়নানামায় স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছেন বলে মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করছেন।

প্রশাসনের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করার অভিযোগ অস্বীকার করেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করি না। বাদী যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন, সেটিই রেকর্ড করা হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মামলা করেছেন এ কথা তিনি কোথাও বলেননি। তবে নিচের দিকের কিছু নাম বোয়ালিয়া থানার ওসি ঢুকিয়েছেন।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে যুবদল নেতা মোজাদ্দেদ জামানি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, উভয়ের সম্মতিতেই চুক্তি হয়েছে। দুই লাখ টাকা চাঁদার জন্য অপহরণের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মোস্তাফিজুর রহমান একজন প্রতারক। তিনি সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর স্ত্রী রেনীর ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক। মোস্তাফিজুর রহমান আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০২৩ সালে ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ২৭ লাখ টাকা নেন, কিন্তু দীর্ঘ দিনেও তিনি ফ্ল্যাট দেননি।’

মোজাদ্দেদ জামানি বলেন, সেই টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য তাঁরা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এ বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও মোস্তাফিজ সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন। তাই গত ৩০ জুন বোয়ালিয়া থানায় সব পক্ষের উপস্থিতিতে একটি আপসনামা চুক্তি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপ ও সামাজিক চাপের মুখে মোস্তাফিজ নিজেই আপসনামা সম্পাদনে সম্মত হন।

মোজাদ্দেদ জামানি বলেন, ‘যেহেতু আমারও একটি ফ্ল্যাট কেনার প্রয়োজন ছিল, তাই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি আমিনুল ইসলামের ফ্ল্যাটটি তাঁর পক্ষে হয়ে কেনার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু তিনি (মোস্তাফিজ) ফ্ল্যাট হস্তান্তরের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আমার ও আমার রাজনৈতিক অনেক সহকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মিথ্যা মামলা করেন। এটি সাজানো মামলা।’ তিনি দাবি করেন, ‘মোস্তাফিজ নিজেই স্বীকার করেছেন যে মামলাটি তিনি প্রশাসনের “প্রেসক্রিপশন” অনুযায়ী করেছেন। মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা তাঁকে ফোন করে এই মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, মামলাটি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে বলে মোস্তাফিজ জানান। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ও প্রেসক্রিপশনে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে নজরুল হুদার কাছে স্বীকার করেন। এটি কেবল একটি ব্যক্তির প্রতারণা নয়, এটি প্রশাসন-সমর্থিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ষড়যন্ত্র বলে এখন মনে হচ্ছে।’