শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে ২৫ শিক্ষার্থীর সাজা

নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের দায়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সাজেদুল করিম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সহ–উপাচার্য সাজেদুল করিম বলেন, বিভিন্ন সময়ে নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের অভিযোগগুলো তদন্ত ও পর্যবেক্ষণের পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির জন্য সুপারিশ করেছে প্রক্টরিয়াল বডি। সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। ঘটনাগুলো অনেক আগের। একাধিকবার তদন্তের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। র‌্যাগিংয়ের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ২৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ১২ শিক্ষার্থী ও পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩ শিক্ষার্থী আছেন। তাঁদের মধ্যে মেসে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়নের অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসিরকে আজীবন ও জুনাইদ মোস্তকিমকে চার সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

বাকি ১০ শিক্ষার্থীকে ২ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাঁরা হলেন—প্রীতম সাহা, শরিফুজ্জামান খান, সাবিত আবরার, অনিক আহমেদ, সুয়েল রানা, জুবায়ের হোসেন তালুকদার, নাঈম মিয়া, বিকাশ চন্দ্র ধর, মিঞা মো. সাইয়্যেদুল বাশার ও রাজন সাহা।

অন্যদিকে গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫ ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ৫ জন ছাত্রীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে কাজী তাসমিয়া হককে চার সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বাকি চারজনের মধ্যে ফারজানা মেহেরুন, তাসমিয়াহ আলম, লামিয়া ইসমাইল ও শ্রাবণী দেকে আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের পাশে একটি বাসায় পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন ও সাগর হোসেনকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে একই শিক্ষাবর্ষের শিবরাজ ত্রিপুরা, জুবায়ের আবদুল্লাহ, রিয়াদুস সালেহীন, তন্ময় কর্মকার, ইয়াজউদ্দিন পাটোয়ারী ও নাফিজ ইমতিয়াজকে আবাসিক হল থেকে আজীবন বহিষ্কার অথবা হলে ভর্তি না থাকলে ভবিষ্যতে হলে আসন প্রদান না করার জন্য বলা হয়।

সাজাপ্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ আবাসিক হলে না থাকলে ভবিষ্যতে তাঁদের কোনো আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে র‌্যাগিংয়ের মতো কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জন্য তাঁদের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে মুচলেকা দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে র‌্যাগিংয়ের ফলে মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে যায়। এতে অনেকে একাডেমিক জায়গা থেকে বিচ্যুতও হয়ে যায়। এসব র‌্যাগিংয়ের ঘটনা অনেক আগের। ভালো করে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছিলাম।’