
আগামীকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক পরিবহন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—দুই মাস প্রতিদিন দুই হাজার করে পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ ও রাতযাপনের সুযোগ পাবেন। যাত্রার প্রথম দিনে তিনটি জাহাজে মোট ১ হাজার ২০০ পর্যটক সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাহাজমালিকদের সংগঠন।
প্রতিদিন সকাল সাতটার দিকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ ছেড়ে যাবে। ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাবে। পরদিন বেলা তিনটার দিকে পর্যটক নিয়ে জাহাজ কক্সবাজারে ফিরবে। একদিকে যেতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা।
‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনে দুই হাজার পর্যটক আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনটি জাহাজে ১ হাজার ২০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। রাতের মধ্যে আরও কিছু টিকিট বিক্রি হতে পারে। পর্যটক কমে গেলে সব জাহাজ চালানো সম্ভব হবে না।’ তিনি জানান, সোমবার সকালে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ নিয়ে পর্যটকদের প্রথম বহর দ্বীপে যাবে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘টানা ১০ মাস বন্ধ থাকার পর ডিসেম্বর থেকে দুই মাসের জন্য দ্বীপ খুললেও পর্যটকের সাড়া কম। ২৩০টির বেশি হোটেল–রিসোর্ট, কটেজ থাকলেও অধিকাংশ কক্ষ খালি পড়ে থাকার আশঙ্কা আছে।’
সরকারি ঘোষণায় বলা হয়, ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের অনুমতি থাকলেও রাতযাপনের সুযোগ না থাকায় এবং জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় নভেম্বরে কেউ ভ্রমণে যেতে পারেননি। ডিসেম্বর–জানুয়ারি দুই মাস রাতযাপনের অনুমতি থাকলেও জাহাজ চলাচলের জন্য বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতের বেলা সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয় এবং সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরযান চলাচল বন্ধ এবং নিষিদ্ধ পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা কঠোরভাবে তদারকি করা হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা বলেন, ‘জাহাজগুলো কঠোর নজরদারিতে থাকবে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক পরিবহন করতে দেওয়া হবে না। কক্সবাজার জেটিঘাট ও সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
জাহাজমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে ৮টি জাহাজে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছিলেন ৪৮ হাজার ২১৯ জন, আর জানুয়ারিতে ৫৬ হাজার ৭৯১ জন। দুই মাসে মোট ১ লাখ ৫ হাজার ১০ জন। অতিরিক্ত যাত্রী মেলায় জাহাজগুলোতে আরও ৫ হাজার ৯৬৭ জন পরিবহন করা হয়। সব মিলিয়ে দুই মাসে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছিলেন ১ লাখ ১০ হাজার ৯৭৭ জন পর্যটক। অথচ ৮টি জাহাজের দৈনিক ধারণক্ষমতা ছিল ৩ হাজার ২১৯ জন।
তদারকি কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, গত বছর তল্লাশিতে জাহাজ থেকে ৮৭ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন ও ২৪১ কেজি প্লাস্টিক উদ্ধার করা হয়েছিল। এবারও একই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে দ্বীপটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি সেন্ট মার্টিনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।