
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলা অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অনড় শিক্ষকেরা। আজ বুধবার ছিল তাঁদের কর্মবিরতির সপ্তম দিন। ফলে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারির সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই শোকজ করা হয়েছে।
শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও শিক্ষার্থীরা এটিকে প্রহসন হিসেবে দেখছেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনার বিচারের জন্য নতুন তদন্ত কমিটি গঠন এবং আগের কমিটির প্রতিবেদন বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার উপাচার্যের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। শোকজ করার প্রতিবাদে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ ভালোভাবে নেয়নি শিক্ষক সমিতি। সমিতির নেতারা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের নতুন কোনো আন্দোলন তাঁদের ক্লাসে ফেরার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে পারে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। আমরা ক্লাসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। প্রশাসন যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আশা করছি আমরা রোববারেই ক্লাসে ফিরতে পারব। তবে অন্য কোনো ঝামেলা তৈরি হলে তখন কী হবে, তা এখনই বলতে পারছি না।’
‘অন্য ঝামেলা’ বলতে শিক্ষার্থীদের নতুন করে আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করছেন কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা (শিক্ষার্থীরা) বিভিন্ন ধরনের মুভমেন্ট করছে, কথাবার্তা বলছে। সেটা প্রশাসন কীভাবে দেখছে, তা প্রশাসন বলতে পারবে। ক্লাস শুরু করতে হবে, এটা সাধারণ শিক্ষার্থী এবং আমরা শিক্ষকেরাও চাচ্ছি। আমরা সেদিকেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে এবং আমরাও প্রশাসনকে ক্লাসে ফেরার জন্য আমাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছি।’
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। তাঁরা বলছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার বিচারের জন্য ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত কমিটি ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি হল ‘ভ্যাকান্ট’ পর্যন্ত তদন্ত করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শাস্তি দিয়েছে। সিন্ডিকেটের এক সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে পরের আরেক সভায় তা প্রত্যাহারও করা হয়েছে। এখন নতুন করে আবার শাস্তির আওতায় আনার জন্য শোকজ করা হয়েছে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তাঁদের সব ধরনের প্রতিবাদকেও অপরাধের আওতায় ফেলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্য সাবেক ভিসি অধ্যাপক মাছুদের পক্ষে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন। একই ব্যক্তি তদন্ত কমিটিতে আছেন এবং শৃঙ্খলা কমিটিতেও আছেন। শিক্ষার্থীরা ওই তদন্ত কমিটি আগেও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ ছাড়া সাবেক উপাচার্যের ‘পতনের’ পরে শাস্তিপ্রাপ্ত ৩৭ জনের তালিকা তদন্ত কমিটির সদস্য অথবা সাবেক ভিসিপন্থী শিক্ষকেরা যে পরিবর্তন করে দেননি, সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? কারণ, আগে তো শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের নামই প্রকাশ করা হয়নি।
আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রকাশিত তালিকা বাতিল করে নতুন করে বাইরের সদস্যসহ নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৮ ফেব্রুয়ারির বিচার এবং একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন বলে জানান তাঁরা।
অন্যদিকে ৫ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। শিক্ষকদের দেওয়া সেই ৭ কর্মদিবসের সময়সীমা আগামীকাল ১৫ মে শেষ হবে।
এসব বিষয়ে জানতে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হজরত আলীকে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেয় সরকার। এরপর গত ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।