
দুই হাতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে ভাঙা কণ্ঠে ছলিমা বেগম বলেন, ‘এই বয়সে হাটির পাও না, কাজ করির পাও না। ঝরি মতো শীত পড়ে দিনে-রাইতে, শরীর হিয়াল হয়া যায়, ঠান্ডাতে ঘুমার পারো না। তোমার কম্বল কোনাত উসুম নাগিল, আরাম পানু। এই ঠান্ডাত কম্বল কোনা গাওত দিয়া জানটা বাঁচাইম।’
ছলিমা বেগমের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীঘেঁষা বালাপাড়া গ্রামে। ১৫ বছর আগে তিনি স্বামীকে হারিয়েছেন। তেমন হাঁটাচলা করতে পারেন না। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় চলছে তাঁর জীবন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কম্বল নিতে এসেছিলেন ছলিমা বেগম। সেখানে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে তাঁর মতো ৯টি গ্রামের ২২০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণ করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, প্রথম আলো বন্ধুসভা তারাগঞ্জের আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম, বন্ধুসভার সদস্য শিপুল ইসলাম প্রমুখ।
লাঠিতে ভর দিয়ে কম্বল নিতে এসেছিলেন কসাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোকলেছার রহমান। কম্বল হাতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই চার দিন ধরি বেলা (সূর্য) উঠে না। শীতের তীব্রতা বেশি। ঘরের বাইরে যাবার পারি না। খাবার জোগার করা কঠিন হয়া গেইছে। তাঁর ওপর ঠান্ডার কামড়। মোটা কাপড়, কম্বল কিনার সামর্থ্য হামার নাই। কম্বলটা পানু পরিবারে অনেক উপকার হইল।’
কম্বল হাতে পেতেই মলিন মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে মেনানগর গ্রামের মরিয়ম বেগমের। জীবনের পড়ন্ত বেলায় তিনি টিকে আছেন ভিক্ষা করে। চোখ মুছে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘এই শীতের রাইতে ঘুম আইসে না। কাঁপতে কাঁপতে ফজর হয়া যায়। ভিক্ষা করি পেটের ভাত জোগাই। কম্বল কিনার কপাল মোর নাই। আল্লাহর দরবারোত বহু আবদার করছু একনা কম্বলের জন্যে। আজ সেই সম্বল পানু। এ্যালা থাকি মোর আরামে রাইত কাটবে।’
কাউয়াপাড়া গ্রামের স্বামীহারা বৃদ্ধা ফজিতোন নেছা বলেন, ‘শীত আইলে ভয় ধরে—রাইত কেমন করি যাইবে। কম্বলটা বুকের ওপর ধরছু, মনে হওছে কেউ যেন আদর করি মোক ঢাকা দিল। তোমরা এই শীত থাকি মোক বাঁচাইনেন, আল্লাহ তোমার ভালো করবে।’