
খুলনায় সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামানের মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা—সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বজনদের দাবি, এটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশ বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওয়াহেদ-উজ-জামান তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন। মেজ ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক বছর আগে মারা যান। ছোট ভাই আনিছুজ্জামান দুলু ঢাকায় ব্যবসা করেন। নগরের শিববাড়ি মোড়–সংলগ্ন ইব্রাহিম মিয়া রোডে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি থাকলেও সেটি চার বছর আগে বিক্রি করা হয়। এরপর ওয়াহেদ-উজ-জামান সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। প্রায় চার মাস আগে তাঁর স্ত্রী নিখোঁজ হন। আজ ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাগমারা এলাকায় নতুন বাসায় ওঠার কথা ছিল তাঁর।
ছোট ভাই আনিছুজ্জামান দুলু প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত মাসে ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়ে কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন ভাই। তখন আমি তাঁকে ঢাকায় আসতে বলেছিলাম। আসার কথা বললেও আর আসেনি। তেমন কোনো বিষয়ই আমাদের সঙ্গে শেয়ার করত না। শনিবার রাতে শেষবার কথা হয়েছে। আমার কাছে এটা হত্যা মনে হচ্ছে। একটা ফোন তো অন্তত করবে বা একটা মেসেজ তো করবে যে ভাই আমার আর ভালো লাগছে না। সুস্থ একজন মানুষ হঠাৎ করে এভাবে মারা যেতে পারে না।’
এর সঙ্গে ভাই যোগ করলেন, ‘তাঁর চাকরিটা মনে হয় ঠিকমতো ছিল না। স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর মন খারাপ থাকত তাঁর। তবে কারও সঙ্গে শত্রুতা বা অন্য কোনো বিষয়ে আমাদের জানা নেই। শুনেছি সেতুর ওপর কারও সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হচ্ছিল। এরপর তাঁকে ঝাঁপ দিতে দেখেছে সেখানকার একজন কর্মী।’
ওয়াহেদ-উজ-জামানের শ্যালকের স্ত্রী নুরনাহার পারভীন বলেন, শুক্রবার ভাড়া করা নতুন বাসায় মালপত্র তুলেছিলেন তিনি। দুপুরে তাঁদের বাসায় খেয়েছেন, এরপর যশোরে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। শনিবার বিকেলেও তাঁদের বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া করে যান। রোববার সকালে নাশতা করে বেরিয়ে যান। এ সময় তিনি এক বোতল পানি ও একটা ক্যাপ চেয়ে নেন। দুপুরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পান। রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।
নুরনাহার পারভীন বলেন, ‘আমাদের ননদ (বুলুর স্ত্রী) নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে অশান্তিতে ছিলেন। কান্নাকাটি করতেন, খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করতেন না। এ জন্য আমরা তাঁকে আমাদের কাছে থাকতে বলেছিলাম। তবে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে বিশ্বাস করি না। বাসা থেকে সুস্থ মানুষ বের হয়েছিল। আমরা হত্যা বলেই মনে করছি। আমরা চাই পুলিশ ভালোভাবে তদন্ত করুক।’
খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) সভাপতি মহেন্দ্র নাথ সেন বলেন, ওয়াহেদ-উজ-জামান দীর্ঘদিন বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
কেএমপি সদর থানার নৌ–পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সেতুর ২ নম্বর পিলারের বেসমেন্টের ওপর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। সুরতহালে দেখা গেছে মুখ থেঁতলানো, দুই হাত ও বাঁ পা ভাঙা। মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামানের মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। খুলনা প্রেসক্লাবে সহকর্মীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর নগরের গোয়ালখালি কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে।