
বড় হওয়ার জন্য স্বপ্ন থাকতে হবে। বড় স্বপ্ন নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। সে জন্য তোমাদের প্রস্তুত হতে হবে। শুধু মেধাবী হলেই চলবে না, মানবিক মানুষ হতে হবে। সততা ও পরিবার-দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। তাহলেই তোমরা আলোকিত ও সফল মানুষ হতে পারবে।
আজ শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জে শিখো-প্রথম আলো আয়োজিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনীন্দ্র কুমার রায় এ কথাগুলো বলেন।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে প্রথম আলো। এতে জেলার পাঁচটি উপজেলার হাজারো কৃতী শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
সকাল থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। সকাল সাড়ে নয়টার মধ্যে মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নিবন্ধন বুথ থেকে শিক্ষার্থীরা স্ন্যাকস, উপহার ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে। বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি, খোশগল্পে মেতে ওঠে।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব। এরপর ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মজিবুল হক। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের দেওয়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান তিনি। এরপর থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন স্কুলশিক্ষার্থী শব্দ, মেঘলা ও সাদিকা।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ। তিনি বলেন, ‘তোমরা উচ্চশিক্ষিত হবে। তবে শুধু ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না, মানবিক গুণাবলি নিয়ে আলোকিত মানুষ হয়ে উঠতে হবে।’
উৎসবে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন শিখোর প্রতিনিধি রায়হান, এর আর খান, রোমান ও শহিদুল। সফল নারী উদ্যোক্তা অপরাজেয় লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুনিয়া জামান বলেন, ‘তোমরা কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, বিসিএস ক্যাডারসহ নানা কিছু হতে চেয়েছ। কিন্তু শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে কেউ তোমরা ব্যবসায়ী হতে চাওনি। ব্যবসাতেও আছে সম্ভাবনার দ্বার।’
লাইভ শপিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা আশিক খান বলেন, ‘আমিও ১৫ বছর আগে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা পেয়েছিলাম। শুধু জিপিএ-৫ পেলেই জীবন শেষ নয়, বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতিও থাকতে হবে।’
অধ্যক্ষ রুমন রেজা বলেন, ‘তোমরা জীবনের প্রথম ধাপে সাফল্য অর্জন করেছ। এখন প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে বড় হতে হলে মেধাবীর পাশাপাশি আলোকিত মানুষ হতে হবে। বাংলাদেশের জয় দেখতে চায় বলে প্রথম আলো অনেক বছর ধরে সারা দেশে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আমাদের আর্দশ শিক্ষক হচ্ছে আমাদের মা। আমাদের বড় শিক্ষা নিতে হয় চারপাশ থেকে। তাই বড় স্বপ্ন নিয়ে এগোতে হবে, যাতে পরিবার, সমাজ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারো।’
শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, মুখস্থ আর মাদককে ‘না’ বলার শপথ করান প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রধান সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। সুন্দর মনের মানুষ হতে হবে। আর মনে রাখতে হবে জিপিএ-৫ না পেলেও জীবন থেমে যাবে না।’
অতিথিদের বক্তব্যের ফাঁকে ‘চলো বাংলাদেশ’ গানে নৃত্য পরিবেশন করে কৃতী শিক্ষার্থী বিন্দু পাল ও অনন্যা গোস্বামী। প্রথম আলো বন্ধুসভা ও মাইম ফেইসের যৌথ প্রযোজনায় মূকাভিনয় ‘ভিজ্যুয়াল লাইভ’ পরিবেশন হয়। গান পরিবেশন করে কৃতী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের করতালি, হাসি-আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে পুরো মিলনায়তন হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।
অনুষ্ঠানে আসা অভিভাবকেরাও সন্তানদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগে মেতে ওঠেন। কামরুন নাহার বলেন, ‘প্রথম আলোর উদ্যোগে সন্তানদের এই সংবর্ধনায় আমরা অভিভাবকেরাও গর্বিত।’ কৃতী শিক্ষার্থী আফরিন জাহান বলে, ‘কয়েক দিন ধরে সংবর্ধনায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বাবার সঙ্গে আড়াইহাজার থেকে এখানে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান। প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সাব্বির আল ফাহাদ, উজ্জ্বল উচ্ছ্বাস, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। দুপুর ১২টায় বন্ধুসভার সভাপতি নয়ন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। শেষে সংগীত পরিবেশন করেন তরুণ প্রজন্মের গায়ক ‘ইন্ডিয়ান আইডল’–এর প্রতিযোগী জাহিদ অন্তু।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।