পটুয়াখালীতে ইলিশ চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে বেঁধে রোদের মধ্যে বসিয়ে রেখে হাতে ইলিশ ধরিয়ে ছবি তোলা হয়
পটুয়াখালীতে ইলিশ চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে বেঁধে রোদের মধ্যে বসিয়ে রেখে হাতে ইলিশ ধরিয়ে ছবি তোলা হয়

পটুয়াখালীতে ইলিশ চুরির অভিযোগ তুলে দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে মারধরের অভিযোগ

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় ইলিশ মাছ চুরির অভিযোগ তুলে দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরমহিরউদ্দিনে পাউবোর নতুন স্লুইসগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাত-পা বেঁধে শিশুদের হাতে মাছ ধরিয়ে দিয়ে তোলা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন চরবিশ্বাস ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাসান সরদার ও মাছ ব্যবসায়ী ইমরান বয়াতি। ভুক্তভোগী শিশুদের একজন (১৪) চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরআগস্তি গ্রামের বাসিন্দা ও অন্যজনের (১০) বাড়ি জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মহিষকাটা গ্রামে। তাদের একজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে।

ভুক্তভোগী শিশুদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার রাতে স্থানীয় জেলে জয়নাল খাঁর সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যায় শিশু দুটি। এরপর রাত গভীর হলে তারা নৌকায় রাত কাটায়। পরদিন সকালে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ইমরান বয়াতি শিশু দুটিকে ধরে তাঁর আড়তে নিয়ে যান। তিনি আড়ত থেকে ১০টি ইলিশ চুরি করার অভিযোগ তুলে শিশু দুটির হাত-পা বেঁধে মারধর করেন। তাদের রোদের মধ্যে বসিয়ে রেখে স্বীকারোক্তি আদায় করে হাতে ইলিশ দিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এক শিশুর নানা বলেন, গতকাল সকালে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দুজনকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রোদের মধ্যে বসিয়ে রাখা অবস্থায় দেখতে পান। পরে মাছ ব্যবসায়ী ইমরান বয়াতি ও ইউপি সদস্য হাসান সরদারসহ স্থানীয়দের কাছে আকুতি জানিয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা মাছ চুরির অভিযোগ তুলে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। পরে মাছ চুরির টাকা বাবদ তাঁর কাছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ সময় তাঁর কাছে নগদ টাকা না থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখেন তাঁরা। এরপর তাঁর নাতিসহ দুই শিশুকে মুক্ত করে বাড়িতে ফেরেন। মারধরের কারণে তাঁর নাতির শরীরে ফোলা জখম হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য হাসান সরদার বলেন, ওই শিশুরা ইমরানের মাছের আড়ত থেকে ইলিশ চুরি করেছে। এটা শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। পরে ক্ষতিপূরণ বাবদ শিশুর স্বজনদের কাছে মাছের টাকা চাওয়া হয়। স্বজনেরা তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের মারধর করা হয়নি।

মাছ ব্যবসায়ী ইমরান বয়াতি বলেন, ওই শিশুরা রাতে তাঁর আড়ত থেকে মাছ চুরি করে করেছে। এ জন্য তিনি দুজনকে ধরে আনেন। তারা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। এ সময় চুরির প্রমাণ রাখতে তিনি ইলিশ মাছ দিয়ে ছবি তোলেন। তিনি বলেন, ওই দুজন আগেও চুরি করেছে, যা স্থানীয়ভাবে সালিস-মীমাংসা হয়েছে।

গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশাদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।