
নরসিংদী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর রাহামনি নামে ছয় বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শিশুটির পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা ‘ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে অস্ত্রোপচার করা দুজন চিকিৎসককে মারধর এবং অবরুদ্ধ করলে পুলিশ এসে তাঁদের থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নরসিংদী শহরের হেমেন্দ্র সাহার মোড় এলাকায় লাইফ কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাহামনি রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের হাঁটুভাঙ্গা এলাকার নিজামুল হক ও তানিয়া আক্তার দম্পতির একমাত্র মেয়ে।
একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা তানিয়া আক্তার বিলাপ করে বলছিলেন, ‘সুস্থ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এলাম, এখন তাঁর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। আমার মেয়ে আর স্কুলে যাবে না, আর আইসক্রিম খেতে চাইবে না। একমাত্র মেয়ে আর নাই, আমি কী নিয়া থাকব?’
শিশুটির বাবা নিজামুল হক বলেন, ‘অপারেশন করার পর আমাদের বলছে, ১৫ মিনিট পর জ্ঞান ফিরবে। অনেকটা সময় পার হলেও মেয়ের জ্ঞান ফিরছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি বলা হলে ডাক্তার এসে আবার আমার মেয়েকে ওটিতে নেয়। বারবার চেষ্টা করলেও আমাকে যেতে দেয়নি তারা। কিছুক্ষণ পর আমি জোর করে ওটিতে গিয়ে মেয়ের পায়ে হাত দিয়ে দেখি পা ঠান্ডা হয়ে আছে। তখনই বুঝতে পারি আমার মেয়ে আর নেই। তখন তারা আমার মরা মেয়েকে আইসিইউতে রাখতে ঢাকায় নিতে বলছিল। আমার মেয়েকে তারা মেরে ফেলেছে।’
মারধরের শিকার ও থানা হেফাজতে নেওয়া দুই চিকিৎসক হলেন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন তন্ময় কর এবং অ্যানেসথেসিওলজিস্ট সুদীপ সাহা। তন্ময় কর বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হলেও তিনি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন। অন্যদিকে সুদীপ সাহা নরসিংদী সদর হাসপাতালে কর্মরত।
শিশুটির পরিবার জানায়, রাহামনি দীর্ঘদিন ধরেই গলায় টনসিলের সমস্যায় ভুগছিল। স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক তন্ময় করের কাছে সে চিকিৎসা নিচ্ছিল। অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হলে রাহামনিকে বৃহস্পতিবার বিকেলেই ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অস্ত্রোপচার করেন তন্ময় কর। এর আগে তাকে অ্যানেসথেসিয়া দেন চিকিৎসক সুদীপ সাহা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের প্রায় এক ঘণ্টা পরই মারা যায় রাহামনি। তাঁর বাবা-মা অভিযোগ করছেন, ভুল চিকিৎসায় তাঁরা একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন।
শিশুটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে দুই চিকিৎসককে মারধরের পর অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ওই দুই চিকিৎসককে নরসিংদী মডেল থানায় নিয়ে যায়।
লাইফ কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ফজলুল কাদের জানান, অস্ত্রোপচার শেষে বেডে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই শিশুর পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। পরে তাকে আবার চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য রেফার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই শিশুটি মারা যায়।
নরসিংদী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মে. আনোয়ার হোসেন জানান, শিশু রাহামনির মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। শিশুটির লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়ি নিয়ে গেছেন পরিবারের সদস্যরা। কোনো অভিযোগ না থাকায় ওই দুই চিকিৎসককে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।