
রাজশাহীর পবা উপজেলায় বাঁধাকপি খাওয়ার পর ৭টি গাভির মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে অপর ৫০টি গরু। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার বালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বিকেলে মাঠ থেকে ফেরার পথে চারটি এবং বাড়িতে ফেরার পর তিনটি গাভি মারা গেছে।
মারা যাওয়া প্রতিটি গাভির নাম আছে। গাভিগুলো হলো—গুলবাহার, রেনুবালা, বৈশাখী, জামাদার, ফুলকি, লালমন ও পিঠালি। গাভিগুলো দুটি পরিবারের। এর মধ্যে বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানার দুটি ও তাঁর ভাই জুয়েল রানা, রুবিনা খাতুন ও রুনা খাতুনের একটি করে আছে। এ ছাড়া একই গ্রামের আবদুল করিমের দুটি গরু মারা গেছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকেরা মৃত গরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা বলছেন, বাঁধাকপিতে দেওয়া কীটনাশক থেকে বিষক্রিয়া হয়ে গরুগুলো মারা যেতে পারে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে। আর অসুস্থ গরুগুলোকে সুস্থ করে তুলতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চারজন কর্মী গত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাগানে প্রায় ৪০টি গরু একসঙ্গে রাখা হয়েছে। সেখানে একের পর এক গরুকে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া কয়েকটি গরুকে স্যালাইনও দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন মিলে স্যালাইন দেওয়া গরুটিকে ধরে আছেন। আরেকজন উঁচু করে ধরে আছেন স্যালাইনের বোতল। গরুগুলোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য ঘটনাস্থলে এসেছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান। উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকার। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কয়েকজন কর্মী গরুগুলোকে ধরে ধরে ইনজেকশন আর স্যালাইন দিতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।
সোহেল রানা বলেন, এবার বাজারে বাঁধাকপির দাম নেই। তাই মো. শরিফ নামের এক চাষি তাঁর ২৫ কাঠা জমির বাঁধাকপি গরুকে খাওয়ানোর জন্য বেচে দেন। তিনি (সোহেল), মো. আজাহার, আবদুল করিম ও জুয়েল রানা এক হাজার টাকায় বাঁধাকপিগুলো কিনে নেন। এরপর বুধবার সারা দিন তাঁদের প্রায় ৯০টি গরুকে খেতে ছেড়ে দিয়ে বাঁধাকপি খাওয়ানো হয়। পাঁচ থেকে ছয় কাঠা জমির বাঁধাকপি খাওয়ানো হয়। বিকেলে বাড়ি আনার সময়ই রাস্তায় পড়ে চারটি গরু মারা যায়। বাড়ি ফেরার পর মারা গেছে তিনটি। সোহেল রানা ধারণা করছেন, বাঁধাকপি খেতে কীটনাশক দেওয়া ছিল। কীটনাশকযুক্ত বাঁধাকপি খেয়ে গরুগুলো মারা গেছে। অন্যগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গরু মারা যাওয়ায় তাঁদের ৮-৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
খেতে কীটনাশক দেওয়া ছিল কি না, সে ব্যাপারে কৃষক শরিফের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। সকালে সোহেল রানার বাড়ির সামনে বসে ছিলেন তাঁর শাশুড়ি মোসা. শহরবানু। তিনি কাপড় টেনে চোখের পানি মুছছিলেন। শহরবানু বলেন, ‘ওই বাগানে গরুগুলা সব আছে। আমি স্ট্রোক করা মানুষ। হাঁটতে পারি না বুইল্যা যাইতে পারছি ন্যা। ভিতরডা খুব খারাপ করছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান বলেন, মারা যাওয়ার পর তিনটি গরু জবাই করা হয়েছিল। পরে মাংস মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। এর আগে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে পরীক্ষার জন্য। আসলেই বিষক্রিয়া, নাকি অন্য কোনো কারণে গরু মারা গেছে, তা নমুনা পরীক্ষার পর নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক এখানে আছি। গত রাতে আমাদের চারজন কর্মী সারা রাত জেগে ছিলেন এখানেই। প্রায় ৫০টি গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন গরুগুলো ভালো আছে। তার পরও ভিটামিনজাতীয় ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। শরীরে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে কিছু গরু স্যালাইন পাচ্ছে।’