
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান এবং আমাদের একাত্তরের সংগ্রাম, আমাদের সাতচল্লিশের আজাদির লড়াই—এই সবকিছুর ভেতর দিয়ে আমরা যে স্বাধীন, সার্বভৌম, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র পেতে চেয়েছিলাম, তার একটি সুযোগ ও সম্ভাবনা আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের পর তৈরি হয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা ও চব্বিশের স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী নয়, আমরা সেই ধারাবাহিকতাতেই আছি।’
আজ বুধবার মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেবল ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই যাতে সেই সকল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে না দিই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একধরনের নির্বাচনকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিচার ও সংস্কারের প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে, অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনর্বাসনের জন্য নানা ধরনের পাঁয়তারা চলছে। আমরা মনে করি, এই সবকিছুকেই প্রতিহত করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।’
উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম। এই বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায়বিচার ও অধিকারের জন্য। আমরা মনে করি, আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে এবং বারবার যেটি বেহাত হয়েছে এবং আমাদের বারবার রক্ত দিতে হয়েছে, যাতে সামনের দিনগুলোতে আর রক্ত দিতে না হয় জনগণের, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা আজকের দিনে।’
এর আগে আজ সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, আজকের স্বাধীনতা দিবস প্রমাণ করে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। যাঁরা বলেন, তাঁরা আজকের স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি যে একাত্তর ও চব্বিশ আলাদা কিছু নয়, বরং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই একাত্তরের স্পিরিট পুনর্জীবিত হয়েছে। একাত্তরে আমরা যেটি চেয়েছিলাম, সেটি ৫৪ বছরে অর্জিত হতে পারেনি। একটি ফ্যাসিবাদ ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে চেপে বসেছিল। তাই আরেকটি গণ–অভ্যুত্থানের প্রয়োজন হয়েছিল। একাত্তরের যে সাম্যের কথা বলা হয়েছিল, চব্বিশেও কিন্তু সেই বৈষম্যহীন সমাজের কথাই আমরা বলছি। ফলে যারা একে পরস্পরবিরোধী বা মুখোমুখিভাবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য অসৎ এবং আমরা মনে করি, তারা চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানকে, ছাত্রজনতার বিজয়কে প্রকৃতভাবে উপলব্ধি করতে পারেননি।’
সংস্কার ও বিচারবিহীন জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হলে সেটি মেনে নেওয়া হবে না বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কেবল কোনো একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য (যদি) নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয় সংস্কার ও বিচার ছাড়া, তাহলে তা অবশ্যই মেনে নেওয়া হবে না।’
৫ আগস্টের আগে ও পরে দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্যের কিছুটা ফাটল ধরেছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় ঐক্যের যে সুযোগ এবং ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, আমরা এখনো সেই ভিত্তিতেই আছি। কিন্তু এখন হয়তো বিভিন্ন দলের এজেন্ডা আলাদা হচ্ছে। তবে আমরা যদি চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে চাই, দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের একই পাটাতনে থেকে পরস্পর ভিন্ন মত ও ভিন্ন লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের সামনের দিনে একসঙ্গে এগোতে হবে। যদি কেউ আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, জনগণের যে সংস্কার ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, তা থেকে সরে যায়, তাহলে অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে আর ঐক্যের সুযোগ থাকবে না।’