চাকসু নির্বাচনে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লালত্লান সাং বম
চাকসু নির্বাচনে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী  লালত্লান সাং বম

চাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হলেন একমাত্র বম শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক বম শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো বম শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর নাম লালত্লান সাং বম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি চাকসু নির্বাচনে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট পাঁচজন বম জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এর মধ্যে চারজনই শারীরিক শিক্ষা ও স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের। আরেকজন বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের। লালত্লান সাং বম ছাড়া বাকিরা হলেন লালরিন কম বম, লালখুম সাং বম, ফুংলিয়ান কাপ বম ও বেনদিকার বম। তাঁদের মধ্যে লালখুম সাং বম বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের।

লালত্লান সাং বম বামপন্থী শিক্ষার্থীদের সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটসহ কয়েকটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি যে পদে নির্বাচন করছেন, এতে তিনি ছাড়াও আরও ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। ১১টি ধর্ম ও জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের প্যানেল হওয়ায় ‘বৈচিত্র্যের ঐক্যকে’ বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন লালত্লান সাং। তিনি বান্দরবানের রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের জুরভারং পাড়ার বাসিন্দা তনথাং বমের ছেলে। তিনি মা লালঠাজিং বম, দাদু ও সাত ভাই–বোনের সঙ্গে বড় হয়েছেন।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন লালত্লান। এর পর থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে নানান খেলায় অংশ নিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল দলেও তিনবার খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এ কারণে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদটিই বেছে নিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বম জাতিসত্তার শিক্ষার্থী নির্বাচন করছে। চাকসু নিয়ে আমি খুব আগ্রহী। এখন প্রচার চলছে। আশা করছি জয়ী হব। ’

‘বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বম জাতিসত্তার শিক্ষার্থী নির্বাচন করছে। চাকসু নিয়ে আমি খুব আগ্রহী। এখন প্রচার চলছে। আশা করছি জয়ী হব।’
লালত্লান সাং বম, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী, চাকসু

লালত্লান বলেন, পড়াশোনা ও খেলাধুলার শুরু থেকেই তাঁকে বম পরিচয়ের কারণে নানা কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। কিছুদিন আগেও নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে এমনভাবে দেখছিলেন, যেন তিনি সন্ত্রাসী। তাঁর বিভাগের মৌখিক পরীক্ষাতেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সবকিছুর পরও তিনি আশাবাদী। এত বছর পর চাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন, এটাও ভালো অনুভূতি দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে হয়েছে মাত্র ছয়বার চাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সে নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর ছাত্রসংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব, অস্থিরতা আর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় দীর্ঘ বিরতি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, চাকসু নির্বাচন প্রতিবছর হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দীর্ঘ আন্দোলন ও কর্মসূচির একপর্যায়ে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ অক্টোবর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, তা পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে ৯৩১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চাকসুতে ২৬ পদের বিপরীতে ৪২৯ জন আর হল সংসদে ১৯৬টি পদের বিপরীতে ৪৮১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, গতকাল চাকসুর মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকছে। আগামী বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শেষে গণনা শুরু হবে।