
পাহাড়ে আমের মৌসুমের সর্বশেষ আম রাংগোয়াই। সব জাতের আম যখন শেষ হয়ে যায়, তখনো গাছে গাছে পাকা রাংগোয়াই পাওয়া যায়। মৌসুমের সব শেষ এই আম স্বাদে হালকা টক-মিষ্টি। পাহাড়ি মাটিতে আমটি ভালো ফলন দেয়।
গত বুধবার বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো পাড়ায় গিয়ে আমবাগানে শ্রমিকদের ব্যস্ততা দেখা যায়। তাঁরা কেউ কেউ গাছে উঠে আকসি দিয়ে বিশেষ কায়দায় আম ছিঁড়ে বস্তায় ভরে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসছেন। কেউ ক্রেটে (আম পরিবহনের ঝুড়ি) আম ভরছেন, কেউ সড়কের ধারে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা পরিমাপ করে ট্রাকে বোঝাই করছেন।
চকরিয়া থেকে ২৬ জনের একটি দল ম্রোলংপাড়া এলাকার রিংক্লাং ম্রোর বাগানে আম পাড়তে এসেছেন। শ্রমিক মো. ইলিয়াস ও মো. রাফাত জানালেন, তাঁরা মাসব্যাপী চিম্বুক পাহাড়ের বিভিন্ন পাড়ায় দৈনিক ছয় শ টাকা পারিশ্রমিকে আম পেড়ে আসছেন। এখন রাংগোয়াইও প্রায় শেষের দিকে। বড়জোর আরও এক সপ্তাহ থাকবে। আম্রপালি, রুপালিসহ অন্যান্য আম জুনের মাঝামাঝিতে শেষ হয়ে গেছে। ইলিয়াস বলেন, পাহাড়ে এমনিতে বাগানিরা রাংগোয়াই বেশি করেন। অন্যান্য আম খুব কম। শৈলশোভাপাড়া, গ্যেৎসেমানিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পাড়ায় বাগানে আম পাড়তে দেখা দেখা গেছে।
রাংগোয়াই আমকে স্থানীয় লোকজন বার্মাইয়া আমও বলে থাকেন। মিয়ানমারে সীমান্ত অতিক্রম করে থানচি হয়ে ২০০৪-২০০৫ সালে এটি প্রথম বান্দরবানে এসেছে। চিম্বুক পাহাড়ের উদ্যান বাগানের পথ প্রদর্শক (বাগান মাস্টার হিসেবে পরিচিত) তোয়ো ম্রো জানালেন, তিনি রাংগোয়াই চাষ করেছিলেন ২০০৫ সালে। বান্দরবানের বাগানের শুরুও সেই সময়ে বাড়তে শুরু করেছিল। তখন বলা হতো আমটি বার্মাইয়া আম। বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে রোপণের তিন বছরের মধ্যে এই আমের ফলন শুরু হয়। একটি বীজ থেকে চারা হয় বেশ কয়েকটি। এই আমের বুকে সেলাইয়ের মতো একটি দাগ রয়েছে। স্বাদে মিষ্টি হলেও হালকা টক।
বাগানি রিংক্লাং ম্রো বললেন, রাংগোয়াই আম মৌসুমের সব শেষ আম হওয়াই দামও বেশি পাওয়া যায়। পাহাড়ের ঢালু জমিতে গাছে পানি ধারণ ও অভিযোজন ক্ষমতা বেশি। জল সেচের খুব বেশি প্রয়োজন হয় না বলে বিলম্বে মুকুল আসে এবং বিলম্বে পাকে। এ জন্য পাহাড়ের অধিকাংশ বাগানি এই আমের চাষ করে। শুধু বান্দরবান নয়, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এই আম বেশি। তবে এই বছর দাম কম হওয়ায় বাগানিদের সবার মন খারাপ।
ফলের ব্যবসায়ী লালচুং বম জানালেন, রাংগোয়াই আমের ব্যবসা দুইবারে হয়ে থাকে। পরিপক্ব হওয়ার আগে একেবারে কাঁচা অবস্থায় বড় বড় কোম্পানি আচার, জুস করার জন্য নিয়ে যায়। তখন দাম ভালো পাওয়া যায়। আরেকবার মৌসুমের সব জাতের আম শেষে। তখনো দাম কিছু বেশি পাওয়া যায়। তবে এবারে কাঁচা রাংগোয়াইয়ে দাম মোটামুটি পাওয়া গেলেও পাকা অবস্থায় দাম ওঠেনি। এখন তিনি বাগানে প্রতি কেজি রাংগোয়াই কিনছেন ২৫ টাকা করে। গত বছরে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এম শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন পাহাড়ের জলবায়ু ও মাটিজাত বিলম্ব প্রজাতির রাংগোয়াই বান্দরবানসহ শুধু তিন পার্বত্য জেলায় হয়। এই আমের বিশেষত্ব হচ্ছে, এক বীজে বহুভ্রূণ, দেরিতে ফলন, হালকা টক–মিষ্টি। এ ছাড়া খোসা পুরু হওয়ায় পাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রাখা যায়। বাজারজাতের জন্য বেশি দিন টিকিয়ে রাখা যায় বলে দুর্গম পাহাড়ে ৬৫ শতাংশ আমের বাগানই রাংগোয়াই। এ বছর বান্দরবানে ২৫ হাজার ৮৬০ একর আমের মধ্যে ৬৫ শতাংশের বেশি রাংগোয়াই হয়েছে।