প্রথম আলো সব সময় সাহসী সাংবাদিকতা করেছে। সত্য প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। সাহসের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার চট্টগ্রামে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বিশিষ্টজনেরা এই প্রত্যাশার কথা জানান।
চট্টগ্রাম নগরের র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউর মেজবান হলে এ সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা, কবি, সাহিত্যিক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা, আইনজীবী, নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বংশীবাদক ক্যউপ্রু মারমার বাঁশির বাদনে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। বাঁশির সুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। পরে ধন ধান্য পুষ্পে ভরা গানেরও সুর পরিবেশন করেন।
সুধী সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। এরপর প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার সুধী সমাবেশে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও রাষ্ট্র মেরামতের অপূর্ব সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে দুঃখের শেষ থাকবে না। আবার অন্ধকার নেমে আসবে। তিনি বলেন, প্রথম আলো সাহসী সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা রেখেছে। আরও ভালো করতে হবে। ভালোর কোনো শেষ নেই।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করেন বলে উল্লেখ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী। তিনি বলেন, কেউ যেন মনে না করেন ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুন পড়েছেন। তাঁর প্রত্যাশা, প্রথম আলো সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার সাহস রাখবে।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন বলেন, দিনের শুরুতে প্রথম আলো না পড়লে সারা দিন মনে হয় কী যেন একটা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘এখন চট্টগ্রামে যেভাবে নগরায়ণ হচ্ছে, তাতে আমি শঙ্কিত। এটি নিয়ে চিন্তা করা উচিত।’
‘প্রথম আলো প্রথম প্রেম’ হিসেবে আছে বলে উল্লেখ করেন পিএইচপি পরিবারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে পড়াশোনা করে দেশে আসার পর যে পত্রিকা প্রথম হাতে পাই, সেটি হচ্ছে প্রথম আলো। সেই থেকে পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো প্রথম প্রেম হিসেবে আছে। এটি সব সময় অটুট থাকবে।’
সুধী সমাবেশে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বিগত জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর। এখন জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, দেশ কোন দিকে যাবে; তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অনেকেই ভয় পান দেশ কোন দিকে চলে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, নির্বাচনের মাধ্যমে একটা গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হবে। নির্বাচনের বিকল্প নেই। কিন্তু এ কথাও সত্য, নির্বাচন দেশের সবকিছু ঠিক করে দেবে, সেটি নয়।’
নানা খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে উল্লেখ করে প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের দেশের এই সংকট থেকে বের হওয়ার একটাই রাস্তা, সেটি হলো নির্বাচন। ভিন্ন কিছু হলে দেশের সংকট আরও ঘনীভূত হবে।’ তিনি বলেন, তবে আশার কথা হলো, রাজনৈতিক দলগুলো আট মাস-নয় মাস ধরে কথা বলেছে। অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। অনেক বিষয়ে বিতর্ক করেছে। আলোচনা করেছে। অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে কথা বলতে পারেনি। এবার তারা অনেকটাই সফল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্য অনেক বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। তবে ঐকমত্যের চেষ্টা ছিল। আমরা আলোচনার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা সবার কথা বলে আসছি। কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের কথা আমরা বলি না। সবার কথা বলি।’ তিনি বলেন, ‘সব সরকার আমাদের চাপে রেখেছিল। বিগত সরকারের সময় চাপ ছিল প্রবল। এত চাপের পরও প্রথম আলো নিরপেক্ষভাবে লিখে গেছে। সত্য প্রকাশ করে গেছে, সত্যই সাহস।’
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন মতিউর রহমান।
সুধী সমাবেশে চট্টগ্রাম বন্দর, ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানে প্রথম আলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। নারী উদ্যোক্তাদের আরও বেশি সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম আলোর ভূমিকা প্রত্যাশা করেন বক্তারা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সিকান্দার খান, সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মনির উদ্দিন, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সুজিত দত্ত, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক প্রকাশ দত্ত, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দিন, ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন, সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী, সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ।
চুয়েটের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি টেকনোলজির পরিচালক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আহমেদ, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব অনুষ্ঠানে যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ।
প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. মুসলিম, লিগ্যাল এইড চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ রুপন কুমার দাশ, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হুমায়ুন কবির, সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ইকবাল হোসেন। ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদের সাবেক সদস্য জাফর আলম।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক নাছির উদ্দিন চৌধুরী, বারবিডার সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, শিপব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আমজাদ হোসেন চৌধুরী, চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম নুরুল হক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি সাইফুল আলম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এনামুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি এস ইউ এম নুরুল ইসলাম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি শফিউল মোরশেদ চৌধুরী, দুদকের পিপি মোকাররম হোসাইন ও রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি মোরশেদুর রহমান চৌধুরী।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম–১১ বন্দর পতেঙ্গা আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসরাফিল খসরু, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিইউএফটির উপাচার্য মো. ওবাইদুল করিম, আইআইইউসির উপাচার্য মোহাম্মদ আলী আজাদী, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম, এনজিও ইপসার প্রতিষ্ঠাতা মো. আরিফুর রহমান, প্রত্যাশীর নির্বাহী পরিচালক মনোয়ারা বেগম, সিপিডিএলে প্রধান ব্যবসায় উন্নয়ন কর্মকর্তা জিয়াউল হক খান, বিএসআরএমের সিওও হাসান জাফর চৌধুরী, রয়েল সিমেন্টের পরিচালক (করপোরেট) আবুল মনসুর, কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার জাহান, এপিক প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, জিএমজি ফার্নিচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমান, মেরিডিয়ান গ্রুপের চেয়ারপারসন কোহিনূর কামাল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল পাশা, মেট্রোপলিটন হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল হক, এমএএফ সুজের পরিচালক মো. শাহাদাত উল্লাহ।
আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-১১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শফিউল আলম, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম; চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন, নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল আহসান চৌধুরী; এনসিপির চট্টগ্রাম অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক জোবাইরুল আরিফ, তিন পার্বত্য জেলার তত্ত্বাবধায়ক ইমন সৈয়দ।
সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অভিক ওসমান, শুভ্রা বিশ্বাস, প্রমা অবন্তি, মোসতাক খন্দকার, কবি আকতার হোসাইন, কবি রিমঝিম আহমেদ।
চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবিদা মোস্তফা। ফ্যাশন ডিজাইনার সুলতানা নুরজাহান, রওশন আরা চৌধুরী, নূজহাত নুয়েরী কৃষ্টি, নাসরিন সরোয়ার, ফারজানা মালিক, আইনজীবী এ টি এম আফতাব উদ্দীন, মেরিন প্রকৌশলী এস এম এ হান্নান।