
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তাঁর মা তাহমিনা বেগমের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থী। তাঁরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের ভাষ্য, প্রশাসনকে ১২ ঘণ্টা সময় দেওয়ার পরও তারা ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গড়িমসি করছে। এ জন্য তাঁরা পুলিশ সুপার কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের হোতাকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মুঠোফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে, বেলা দুইটার পর ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে। কিন্তু তাঁরা কোনো কথা না শুনে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বেলা দুইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁর কথা না শুনে অবরোধ করতে থাকেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘১২ ঘণ্টা পার হলো, পুলিশ পুলিশ কী করব’, ‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘তুমি কে আমি কে, সুমাইয়া, সুমাইয়া’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘বিচার চাই, বিচার চাই, সুমাইয়া হত্যার বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ফারুক আল নাহিয়ান বলেন, গতকালও তাঁরা একই দাবিতে এখানে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা পুলিশ প্রশাসনকে ১২ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন। পুলিশ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের কথা বলছে। বেলা দুইটায় প্রেস কনফারেন্স হবে বলা হচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে, হবে না। সব মিলিয়ে একধরনের গড়িমসি চলছে। তাঁরা চান, পুলিশ সবকিছু আয়নার মতো পরিষ্কার করুক। খুনি গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উন্মোচন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এখান থেকে সরবেন না।
গতকাল সোমবার সকাল সাতটার দিকে নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি এলাকার পিটিআই মাঠসংলগ্ন ‘নেলী কটেজ’ নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত তাহমিনা বেগম নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ওই ভাড়া বাসায় তাঁরা প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে থাকতেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নিহত সুমাইয়ার সহপাঠী নুরানি শেখ বলেন, ‘আমরা আমাদের সহপাঠীকে হারিয়েছি। কিন্তু ঘটনার শুরু থেকেই পুলিশ বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা করছে। যে পর্যন্ত পুলিশ সবকিছু পরিষ্কার করবে না, সে পর্যন্ত আমরা এখান থেকে এক পা-ও নড়ব না। প্রয়োজনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কুমিল্লা নগর অচল করে দেবে।’
জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার করা হবে।