Thank you for trying Sticky AMP!!

সাদিক আবদুল্লাহর শেষ কর্মদিবসে নিয়োগ দেওয়া ১৩৪ কর্মচারী চাকরিচ্যুত

বরিশাল সিটি করপোরেশন

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর শেষ কর্মদিবসে সিটি করপোরেশনে ১৩৪ জন দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই ১৩৪ কর্মচারীর নিয়োগ গতকাল বৃহস্পতিবার বাতিল করা হয়েছে। নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের ২৮ দিনের মাথায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। চাকরিচ্যুত এই ১৩৪ জন ছাড়া আরও ৫১ জন মজুরিভিত্তিক কর্মচারীকে কর্মস্থলে না আসার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগামী রোববার অফিস খোলার তারিখে বাকিদেরও চাকরিচ্যুত করার নোটিশ প্রদান করা হবে।

এই ১৮৫ কর্মচারীকেই সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে শেষ সময়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। একইভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাদিক তাঁর অনুগত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি ও চাকরি স্থায়ী করেন। এ নিয়ে ওই সময় ব্যাপক বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম নিয়েছিল।

Also Read: বরিশালে জাহিদ ফারুক ও সাদিক আবদুল্লাহ, কার কত সম্পদ

নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে প্রশাসন, হাটবাজার, পরিচ্ছন্নতা, ভান্ডার, বিদ্যুৎ সম্পত্তি, জন্মনিবন্ধন, প্রকৌশল, সিটি নিরাপত্তা, কর আদায়, সম্পত্তি, বাণিজ্য ও জনসংযোগসহ কয়েকটি শাখায় কর্মরত ১৩৪ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে বোর্ডে নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। আরও ৫১ কর্মচারীকে ফোনের মাধ্যমে কর্মস্থলে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে চাকরিচ্যুত অনেকেই দাবি করেছেন, চাকরিচ্যুত করা হলেও অনেক কর্মচারীর এক মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। তাঁরা গত দুই মাস আগে নিয়োগ পেয়ে যোগদান করেছিলেন।

১৮৫ কর্মচারীকেই সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে শেষ সময়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

প্রশাসনিক শাখা থেকে চাকরিচ্যুত অফিস সহকারী তাজাম্মুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর চাকরিতে যোগদান করি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অফিস করেছি। এরপরই জানিয়ে দেওয়া হয়, আমাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।’ নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল ইসলাম জানান, ‘দুই মাস চাকরি করেছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজ শেষে নগর ভবনে গেলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়ে দেন, আর আসতে হবে না। আমাকে এক মাসের বেতন দেওয়া হয়নি।’

Also Read: মেয়াদ শেষ হওয়ার চার দিন আগেই দায়িত্ব ছাড়লেন বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনে এমনিতেই আয় কম। তার ওপর গত পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি কোনো অনুদান ও বরাদ্দ না পাওয়ায় করপোরেশন দেনার দায়ে জর্জরিত। বর্তমান মেয়র ৩০০ কোটি টাকার বেশি দেনা মাথায় নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে সাদিক আবদুল্লাহর পাঁচ বছরের ক্ষমতার আমলে তাঁর অনুগত দলীয় কয়েক শ কর্মীকে মজুরিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সিটি করপোরেশনে। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরের শেষ কর্মদিবসে এক ঘোষণায় আরও ১৮৫ জন মজুরিভিত্তিক কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

গত ১৪ নভেম্বর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। ওই দিন সিটি করপোরেশনের সামনে ফজলুল হক অ্যাভিনিউতে এক নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তব্যে খায়ের আবদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘৩০০ কোটি টাকার দায়দেনার বোঝা নিয়ে আজ দায়িত্ব নিচ্ছি। এটা নগরবাসীর দায়দেনা। তহবিলে আছে মাত্র ১২ কোটি টাকা। এরপরও আমি হতাশ নই, এতে হতাশার কিছু নেই। আমাদের কাজ করতে হবে। নতুন বরিশাল গড়ার যে অঙ্গীকার আমি নির্বাচনের প্রাক্কালে করেছিলাম, আমি আজ আবারও তা পুনর্ব্যক্ত করছি। মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব, সেই অঙ্গীকার আবারও পুনর্ব্যক্ত করছি।’

Also Read: সরকার প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ায় উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি: সাদিক আবদুল্লাহ

এর আগে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ গত ১৩ নভেম্বর প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, ‘এত দিন নগর ভবন যাঁদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, তাঁদের কোয়ালিটি সাবস্ট্যান্ডার্ড। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা যে নতুন যাত্রা শুরু করব, তাতে প্রধান নির্বাহী পদে কোনো কর্মকর্তা এখানে যোগদান করতে চাইছেন না। কেন চান না, আমি সেটা চার মাস ধরে জানার চেষ্টা করেছি। যাঁদেরই বলি, তাঁরাই অভিযোগ করেন, এখানে গেলে ইজ্জত থাকে না, সম্মানহানি হয়। একজন সচিব কয়েক দিন আগে যোগদান করে আবার বদলি হয়ে যেতে চেয়েছেন। আমি অনেক অনুরোধ করে তাঁকে রেখেছি।’

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের যতটা কর্মচারী প্রয়োজন, তার চেয়ে দ্বিগুণ রয়েছে। যাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া। নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী, যখন ইচ্ছা কর্তৃপক্ষ তাঁদের চাকরি বাতিল করতে পারে। তাই প্রয়োজন না হওয়ায় ১৩৪ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।’

Also Read: বরিশালে খায়ের আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর কোলাকুলি