এনসিপির পথসভা। আজ শুক্রবার রাতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে
এনসিপির পথসভা। আজ শুক্রবার রাতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে

খুলনায় নাহিদ ইসলাম

সেই মাফিয়াদের এখন একটি রাজনৈতিক দল সমর্থন দিচ্ছে, প্রশ্রয় দিচ্ছে

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বলব, আগের আমলে আমরা দেখেছি গুটি কয়েক ব্যবসায়ী মাফিয়ায় পরিণত হয়েছিল। সেই মাফিয়াদের এখন আবার একটি রাজনৈতিক দল সমর্থন দিচ্ছে, প্রশ্রয় দিচ্ছে। আর অন্যদিকে আমাদের ক্ষুদ্র–মাঝারি খেটে খাওয়া ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের অত্যাচারে বেহাল অবস্থায় রয়েছে।’

আজ শুক্রবার রাতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে এনসিপির পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ‘সব দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীদের আমরা রক্ষা করব। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিকে আমরা চাঁদাবাজদের দখল থেকে রক্ষা করব।’

এনসিপির এই নেতা বলেছেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরে আমরা বলেছিলাম, এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থা মাফিয়া তৈরি করে, যে ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়, যে ব্যবস্থা সন্ত্রাসীদের তৈরি করে, যে ব্যবস্থা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, যে ব্যবস্থা পুলিশ বাহিনীকে খুনি বাহিনীতে রূপান্তর করে, সেই ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে হবে। সেই ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। কিন্তু নানাভাবে ৫ আগস্ট থেকেই ষড়যন্ত্র হয়েছে এই ছাত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আমরা দেখেছিলাম ৫ আগস্ট কারা ক্যান্টনমেন্ট গিয়েছিলেন, অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে বাদ দিয়ে সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এই ছাত্রনেতৃত্ব অনেক চেষ্টা করেছে এই সরকারকে, এই সময়ের রাজনীতিকে গণ–অভ্যুত্থানের দিকে আনতে।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘নানা পক্ষ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে থাকলেও নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমাদের সাথে নাই। তারা পুরোনো বন্দোবস্তের পক্ষে আছে, পুরোনো বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছু করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা কথা বলে যাচ্ছি। জনগণকে আজ বলতে হচ্ছে, অভ্যুত্থানকারী ছাত্র–নাগরিকদের আজ বলতে হচ্ছে, আপনাদের আবারও প্রস্তুতি নিতে হবে, আবারও মাঠে নামতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে, শহীদেরা এই দায়িত্ব আমাদের দিয়ে গিয়েছেন।’

খুলনার শিববাড়ী মোড়ে এনসিপির পদযাত্রা

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই খুলনা একটি ঐতিহ্যের নগরী। যুগ যুগ ধরে খুলনা শিল্পনগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। সেই শিল্পগুলো একের পর এক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই আবার সেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চালু করতে হবে, আবারও পাটকল চালু করতে হবে, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীর অনন্য নিদর্শন সুন্দরবন। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করে সুন্দরবনকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হয়েছিল। ভারতের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বিভিন্ন দুর্যোগে সুন্দরবন ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই সুন্দরবনকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, গণ–অভ্যুত্থান অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। আমরা বলেছি জুলাই গণ–অভ্যুত্থান কোনো শেষ ছিল না, কোনো সমাপ্তি ছিল না, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ছিল নতুন বাংলাদেশের শুরু। ছাত্র-তরুণ-শ্রমিকদের আন্দোলনের শুরু। সে আন্দোলন আমাদের চলমান রাখতে হবে। আমরা বলে দিতে চাই, নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায়, গণতন্ত্র মানবাধিকার এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণ–অভ্যুত্থানের সকল ছাত্র-তরুণ এখনো মাঠে রয়েছে। আপনারা যতই চেষ্টা করুন, যতই ষড়যন্ত্র করুন, আমাদের মাঠ থেকে সরাতে পারবেন না। জনগণের পক্ষে আমরা মাঠে থাকব।’

কারও নাম উল্লেখ না করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। আর তারা ভেবেছিল তারা লুটপাটের স্বাধীনতা পেয়েছে। যদি ভেবে থাকেন লুটপাটের স্বাধীনতা পেয়েছেন, খুবই ভুল ভাবছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণ যেভাবে রাজপথে নেমেছিল, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একইভাবে রাজপথে নামতে হবে, আপনারা প্রস্তুত হোন। আমরা ঢাকা আসছি। ৩ আগস্ট এ সবকিছুর জবাব দেওয়া হবে।’

এর আগে শহরের শিববাড়ী মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ মুখর হয়ে ওঠে। পদযাত্রাটি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আবার শিববাড়ীতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে পথসভা হয়।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুম প্রমুখ।