ডেঙ্গু আক্রান্ত কলেজশিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস (১৯) ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন গত বৃহস্পতিবার। প্রথম দুই দিন মশারি ছাড়া মেঝেতে চলেছে তাঁর চিকিৎসা। পরে শনিবার দুপুরে একটি শয্যা খালি হলে সেখানে স্থান হয় ইদ্রিসের।
ফেনীতে চলতি অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। জেলা শহরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। ৪৮ শয্যার এই ওয়ার্ডে আজ সোমবার সকালে ভর্তি ছিলেন ১৮৭ জন রোগী। তাঁদের মধ্যে সাতজন ছিলেন ডেঙ্গু রোগী। সাধারণ রোগীর সঙ্গেই চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। রোগীদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত স্যালাইন, ওষুধ মিলছে না। মশারি ছাড়াই চলছে চিকিৎসা।
গত শনিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত কলেজছাত্র ইদ্রিসের বাবা মো. শহীদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের মুন্সিরহাট সদর থেকে তাঁর ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালটির নতুন ভবনের ছয়তলায় মেডিসিন বিভাগের মেঝেতে চিকিৎসা চলেছে দুই দিন। এরপর শয্যা মিলেছে। ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
জেলায় চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বিগত মাসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ৪৬০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চলতি অক্টোবর মাসেই শনাক্ত হয়েছেন ২৫৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০ জন নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান ফেনীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়লেও মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই। রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও পরীক্ষার জন্য জেলায় ৪ হাজার ৩৬০টি কিট মজুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
গত শনিবার জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন বিভাগের সামনে একটি ফেস্টুন টানিয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ড লেখা হয়েছে। সেখানে এক পাশে কয়েকটি শয্যায় চলছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা। পুরুষ ওয়ার্ডেই চলছে নারী ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
পরশুরাম উপজেলার চন্দ্রলা গ্রাম থেকে অশীতিপর আমেনা খাতুন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত নিয়ে গত ২১ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাঁর শরীরের অণুচক্রিকা (প্ল্যাটিলেট) কমছে। আমেনা খাতুনের মেয়ে হোসনে আরা বলেন, ৬ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও মশারি ছাড়াই তাঁর মায়ের চিকিৎসা চলেছে। হাসপাতালে মিলছে স্যালাইনসহ পর্যাপ্ত ওষুধও।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রাজিয়া আক্তার বলেন, জুলাই মাসের শেষের দিক থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। স্বল্পসংখ্যক নার্স দিয়ে পুরো ওয়ার্ডের সেবা দিতে হচ্ছে।
মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সুলতানা রাজিয়া বলেন, চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জন মহিলা রোগী ভর্তি হয়েছেন। পুরুষ ওয়ার্ডে নারী রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
হাসপাতালটির ডেঙ্গু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক তানভীর মাহমুদ বলেন, বিগত এক থেকে দেড় মাস ধরে জেলায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন রোগী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকেন। আজ ভর্তি আছেন সাতজন। গুরুতর রোগী, বিশেষ করে যাদের প্ল্যাটিলেট ১৫-২০ হাজারের নিচে নেমে গেছে তাঁদের ঢাকা-চট্টগ্রামের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়।
হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত স্যালাইন না পাওয়া ও রোগীদের মশারি টানানোর ব্যবস্থা না করার বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে স্যালাইনসংকট রয়েছে, তাই রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়া হলেও টানানোর ব্যবস্থা না থাকায় মশারিগুলো কাজে লাগছে না।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রোকন উদ দৌলা বলেন, হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে তিন গুণের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবল ও বিভিন্ন জিনিসসংকট থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও সেবিকারা। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নতুন করে ওয়ার্ড খোলার যে জনবল প্রয়োজন সেটি নেই। ডেঙ্গু রোগীদের মশারির বিষয়টি নিয়ে তাদের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ২-১ দিনের মধ্যে মশারি টানানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।